রাসূলের অনুসরণ না করে আবু হানীফা এর অনুসরণ কেন?

আবু হানিফা

প্রশ্ন

ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর ইত্তিবা তথা অনুসরণ করা উত্তম নাকি মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করা উত্তম? এ বিষয়ে আপনাদের অভিমত কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

এ ওয়াসওয়াসাটি সাধারণ মুসলমানদের মনে খুবই চিন্তায় ফেলে দেয়। যৌক্তিক মনে করে ধোঁকায় পড়ে যায়। বলতে থাকে, সত্যিইতো; আমি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করবো নাকি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অনুসরণ করবো?

কিন্তু এ ওয়াসওয়াসাটি মূলত ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুকাবিলায় ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা বলাটা আহমকী ছাড়া কিছু নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিপরীতে কোন উম্মতীর কথা গ্রহণযোগ্য মনে করাইতো কুফরী। সেখানে রাসূলের বিপরীতে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা বলা ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কি হতে পারে?

শুধু তাই নয়, নবীর বিপরীতে উম্মতীকে দাঁড় করানো পরিস্কার নবীকে অপমান করা ছাড়া কিছু নয়

আসলে প্রশ্নটি হবে এমন-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ও ইত্তিবা তাবেয়ী ইমামে আজম আবূ হানীফা রহঃ এবং অন্যান্য প্রসিদ্ধতম গ্রহণযোগ্য দ্বীন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পথপ্রদর্শনে করা উত্তম নাকি নিজের কম আকল ও অজ্ঞতা সত্বেও নিজের অনভিজ্ঞ ও অপূর্ণাঙ্গ বুঝের বা অধুনা নামধারী জাহিল শায়েখদের পথপ্রদর্শনে মানা উত্তম?

উক্ত প্রশ্নের জবাবে আমরা বলি-

আল্লাহর বাণী কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী হাদীস জগতবিখ্যাত ও সর্বজনবিদিত তাবেয়ী উম্মতের ঐকমত্বের দ্বারা প্রমাণিত মুজতাহিদ ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ এবং তার অন্যান্য গ্রহণযোগ্য মুজতাহিদদের পথপ্রদর্শনে মানা জরুরী। নিজের কম সমঝ ও মুর্খতা সত্বেও মনের খাহেশাতের প্রদর্শনে বা উম্মতের ঐক্যমত্বের দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন জাহিল শায়েখদের পথপ্রদর্শনে দ্বীন মানা মুর্খতা ও পথভ্রষ্টতার কারণ।

আর নামধারী কথিত আহলে হাদীসরা দাবি করে-

উম্মতের ঐক্যমত্বের দ্বারা প্রমাণিত মুজতাহিদের পথপ্রদর্শনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিধানকে মানবে না, বরং নিজের অযোগ্যতা, মুর্খতা ও জাহালত সত্বেও নিজের মনের খাহেশাতের পথ প্রদর্শনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানবে। কিংবা উম্মতের ঐক্যমত্ব দ্বারা প্রমাণিত নয়, এমন জাহিল শায়েখদের পথপ্রদর্শনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানবে।

এই হল, আমাদের ও কথিত আহলে হাদীসদের মাঝে মৌলিক পার্থক্য।

আবারো বলছি-

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানবে না ইমাম আবূ হানীফা রহঃ কে মানবে? প্রশ্নটি আসলে এমন নয়। প্রশ্ন হল, ইজমা দ্বারা প্রমাণিত মুজতাহিদ ও তাবেয়ী ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর পথপ্রদর্শনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানবে? না নিজের খাহেশাতের পথপ্রদর্শনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মানবে?

আমরা বলি ইজমা দ্বারা প্রমাণিত মুজতাহিদ, তাবেয়ী ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এবং তার সহযোগী মুজতাহিদদের পথপ্রদর্শনে শরীয়ত মানি। আর কথিত আহলে হাদীসরা নিজের খাহেশাতের পথপ্রদর্শনে বা অধুনা জাহিল শায়েখদের পথপ্রদর্শনে দ্বীনে শরীয়ত মানার দাবি করে।

আফসোস হয় এসব কথিত আহলে হাদীসদের কর্মকান্ড দেখে যেখানে পবিত্র কুরআনে জ্ঞানীদের অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে [সূরা নহল-৪৩} সেখানে তারা জাহিল ও মুর্খদের শায়েখ বানিয়ে তাদের অনুসরণ করছে।
যাদের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বলেছেন, তারা ইলমহীনতার কারণে নিজেরাও গোমরা হবে, আবার অন্যদেরও গোমরাহ করবে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৫১১, বুখারী, হাদীস নং-১০০, মুসলিম, হাদীস নং-২৬৭৩}

আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ভ্রান্ত ফিরক্বা থেকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

والله اعلم بالصواب

2 Comments

  1. yousuf rayhna

    আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ভ্রান্ত ফিরক্বা থেকে হিফাযত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

    Reply
  2. আবদুশ শাকূর

    শয়তান ও নফস্ ধাঁপে ধাঁপে প্ররোচণা দেয়। আজ যারা সালাফদের কথা অগ্রাহ্য করে খালাফ হচ্ছে, নতুন বিষয়াদিকে দ্বীন মনে করছে, দ্বীনের শুদ্ধি-সংশোধনে(?) নিজেদের মন-মস্তিষ্ককে নতুন চিন্তা-চেতনা ও অনধিকারচর্চা পূর্বক গবেষণায় লিপ্ত হচ্ছে, খুব আশঙ্কা আছে শয়তান তাদের মৃত্যুর সময়, নাজুক মুহুর্তে ঈমান ছিনিয়ে নিবে! এমন গোঁড়া ব্যক্তির সাথে কথোপকথনে লক্ষ্য করেছি – শুধু মন যা চায় তা-ই করে। তার দ্বীন শুধুই পরিবর্তনশীল, পরিবর্ধনশীল – মনের গতি যেদিকে, দ্বীনের গতি সেদিকে। “আগে বুঝতাম না” “এখন বুঝি” “অনেক ভুল করেছি” – এই যুক্তি, সেই যুক্তি, আরও কত কী! ঈমান ও স্বচ্ছ অন্তর দিয়ে দ্বীন বুঝবে না, কাফির ও জাহেলদের মতন মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান দিয়ে দ্বীন বুঝবে‍‍‍! তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, আগেকার উলামাগণকে উপেক্ষা করে নব্য বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার, আরবে (তাও মদীনা ইউনিভারসিটিতে) পি.এইচ.ডি করা শায়খ, বা internet-এর দাড়ি-ছাটা, কোট-টাই উস্তাযদের “শায়খ” মানবে! উলামাদের সামনে আসবে না, নিজ ড্রইং-রুমে, প্রতিষ্ঠানে তার অধীনস্থ একে-ওকে ডেকে আজে বাজে মন্তব্য, সন্দেহজনক কথা বলবে। গায়ে পড়ে ফিকহ্-এর ঈমামদের কথা প্রসঙ্গে এরা বলে: কিসের ঈমাম? আমার ঈমামতো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এই হঠকারিদের কথা শুনলে সূরা মুনাফিকুনের প্রথম আয়াত মনে পড়ে! সকল মুসলমানের অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত। আল্লাহ তা’আলার পানাহ!

    Reply

Leave a Comment

Your email address will not be published.