মানবজাতির কল্যানে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ নবী-রাসূল

মানবজাতির কল্যানে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ নবী-রাসূল:

মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ অসীম। যুগে যুগে নবী-রাসূলগনের আগমন তার মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। কারণ, যদি নবী-রাসূলগণের আগমন না ঘটতো তাহলে এই পৃথিবীর মানুষেরা আল্লাহ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারতো না। মহান মালিকের খুশি-অখুশির সন্ধান পেতো না। অধিকন্তু তার সন্তুষ্টি লাথের মাধ্যমে সফল-সার্থক জীবন রচনার পথও বাতলে দেয়ার ছিল না কেউ। আলো-আধার, সফলতা-ব্যর্থতা আর সত্য-মিথ্যার ফারাক থাকতো চিররুদ্ধ। জীবন পদ্ধতি, ইহকালপরকাল, ফকিরী-বাদশাহী, শাসন-প্রশাসনের দীক্ষা পেতো না মানুষ। তাছাড়া মসজিদের ছেড়া চাটাইয়ে বসেও যে অর্ধজাহান শাসন করা যায়  এ্কথাই বা কে শেখাতো!!! অত্যাচারী কায়সার ও কিসরার সিংহাসন উল্টে দেবার  ‍মহামন্ত্র কে শিখাতো এই মানুষকে!! রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা আকাশ আকাশ পংকিলতা, যুলুম-নির্যাতন আর পাশবিকতার কবর রচনা করে সেই মাটিতেই আবার মানবতার সফল চাষ করার মতো বিরল ও বিষ্ময়কর দর্শন হযরতে আম্বিয়ায়ে কেরাম  ছাড়া এই প্রথিবীকে আর কেউ  দিতে পারে নি। মানুষের বিকেক-বুদ্ধি নবুওয়াতের হিদায়াত ও আলো ব্যতীত শুধু অক্ষমই নয় অনর্থকও বটে। সুতরাং আম্বিয়ায়ে কেরামের আগমনে মানবজাতির প্রতি কত বড় অনুগ্রহ সেকথা ভাষায় ব্যক্ত করা সাধ্যাতীত।

চোখ যতই দৃষ্টিসম্পন্ন হোকে সৌর আলোর ছোয়া ব্যতীত তা অর্থহীন। তদ্রুপ মানুষের বিবেক-বুদ্ধি যত প্রখরই হোক না কেন নবুওয়াতের হিদায়াত ব্যতীত তা ভাল-মন্দ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ে ব্যর্থ। অন্ধকার অমাবশ্যার রাতে যেভাবে চোখের শক্তি অকার্যকর; ভ্রান্তি ও গোমরাহীর তিমির নিশীথেও বিবেক-বুদ্ধি সম্পূর্ণ অচল-অকার্যকর।

বিবেক-বুদ্ধিও মানুষকে পথ দেখায়, তবে তা অসম্পূর্ণ, চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত পৌছাতে অক্ষম। মহান প্রভূর পবিত্রতম নামাবলী, গুণাবলী ও তার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌছার ক্ষমতা মানুষের বিবেক-বুদ্ধির নেই এটাই স্বাভাবিক। অথচ মহান মালিকের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি উপলব্ধি ছাড়া মানব জাতির সফলতা লাভ অসম্ভব। আর অসম্বভ বলেই জীবনের সর্বোচ্চ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মহান আল্লাহর, মহান সত্তার, তার সত্য-সুন্দর  গুণাবলী ও তার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির পথ আবিস্কার করা। এবং সে জন্য প্রয়োজন হযরাতে আম্বিয়ায়ে কেরামের হেদায়াত ও রাহনুমায়ী। এই হেদায়াত পথ-প্রদর্শন ও রাহনুমায়ীর লক্ষ্যেই নবী-রাসূলের আগমন। (সীরাতুল মুস্তফ, মাওলানা ইদরিস কান্ধলবী রহ., ২য় খন্ড, ১-২ পৃ)   যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ এসেছেন। আকাশ-যমিনের মালিক, জীবন ও মৃত্যুর প্রভু মহান মাওলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন। বলেছেন- পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সৌহার্দের কথা; সততা, ন্যায়-নীতি ও মানবতার কথা।

যারা ভাগ্যবান, স্বচ্ছ হৃদয় ও চিন্তার অধিকারী তারা নবী-রাসূলগণের এই আহবানকে শত কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তির মত লুফে  নিয়েছেন। পার্থিব ক্লেদ ও পঙ্কিলতা থেকে স্পূর্ণ আলাদা হয়ে ওঠেছেন। স্বীয় কামনা-চিন্তা ও স্বপ্ন  তাড়নাকে পদদলিত করে দাড়িয়েছেন এসে নবীগণের ছাউনী তলে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ কর্ম-চিন্তা সকল কিছু নতুন করে সাজিয়ে  নিয়েছেন আম্বিয়ায়ে কেরামের চিন্তা ও শিক্ষার আলোকে। আর যারা ছিল চিরভাগ্যাহত তারা পরম করুণাময়ের এই অসীম অনুগ্রহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আল্লাহর যমিনে বসবাস করে তারই বিধানাবলীকে মনে করেছে অযাচিত বোঝা, অস্মীকার করেছে মালিকের পথ ও দর্শন। চতুষ্পদ জন্তুর মত মন ও রিপুর আনুগত্যকে মনে করেছে সুখকর স্বাধীনতা। মালিক ও সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যকে মনে করেছে নির্বুদ্ধিতা আর জ্বলন্ত বোকামী।

তারা বরং নিজের অস্পম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিকে পরিপূ্র্ণ বিশ্বস্ত গাইড মনে করেছে। তারা বুঝতে অক্ষম হয়েছে, এই বিশ্বজাহান, আকাশ-বাতাস, পানি-মাটি, পাহাড়-পর্বত, গাছ-গাছালি, ঝর্ণা-ফোয়ারা, নদ-নদী আর বিচিত্র সৃষ্টিলীলায় চিত্রায়িত এই পৃথিবীর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা যিনি তিনি আমার সর্বোচ্চ মনিব ও মালিক। সতরাং তার আনুগথ্যের মাধ্যমে তার নৈকট্যলাভের মত সফলতা ও স্বার্থকতার আর কিছু নেই! ‍কিন্তু তারা  সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি। পার্থিবতার রঙিন স্বপ্নঘোর কাটাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। নশ্বর এই জগতের নিগূঢ় অনন্ত মর্যাদা উপলব্ধিতে তারা অসাধারণ দৈন্যের পরিচয় দিয়েছে। বরং অতিরিক্ত বোকামী আর অতিশয় নির্বুদ্ধিতা-বশত রিপু ও শয়তানের আনুগত্য করেছে। আল্লাহর  সম্মানিত প্রতিনিধিগণকে অস্বীকার করেছে। মিথ্যারোপ করেছে। অবতীর্ণ হয়েছে নির্লজ্জ শত্রুতায়। আগ-পর বিবেচনাশূন্য এই হতভাগ্য মানবগুলো আল্লাহর মহান মনিবের বন্ধুগণকে  সঙ্গী করেত অপমানবোধ করেছে আর তার শত্রুদেরকে বন্ধু করতে বোধ করেছে বিপুল সম্মান ও গৌরব। এহেন বোকা ও নির্বোধের প্রতি কার অনুগ্রহ হবে না?? কে তাদের প্রতি করুণানমিত হবে না??

নবীগণ রীতিমতই তাদের প্রতি কুরণার দৃষ্টিতে দেখেছেন। দয়ার্দ্র পিতা আর মমতাময়ী জননী যেভাবে অবাধ্য সন্তানকে সভ্য ও মানুষ করতে স্বাধ্যের সবটুকু মেহেনত ঢেলে দেয় হযরত আম্বিয়ায়ে কেরামও তেমনিভাবে সাধ্যের সবটুকু সামর্থ ঢেলে চেষ্ঠা করেছেন পথহারা অবাধ্য মানুষগুলোকে পথের সন্ধান দিতে।

তাদের কারো কারো সেই নিখাদ দরদসিক্ত সাধনার কথা বিধৃত হয়েছে পবিত্র কুরআনে এভাবে-
[হযরত নূহ (আ)] আরয করলেন: হে আমার রব! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবা-নিশি (তোমার পথে) ডিকেছি, অথচ আমার আহবান তাদের পলায়নপরতাকেই কেবল বৃদ্ধি করেছে। আপনি তাদের ক্ষমা করে দিবেন এই প্রত্যাশায় যখনই আমি তাদেরকে ডেকেছি ঘৃণায় তারা কানে অঙ্গুলি দিয়ে রেখেছে এবং বস্রাবৃত হয়ে রয়েছে আর প্রদর্শন করেছে প্রচন্ড  অবাধ্যতা। (নূহ:৫,৬)

সারকথা হল, মানবজাতির পথের দিশা ও মনযিলের সন্ধান দেয়ার লক্ষ্যেইে আবির্ভূত হন নবী-রাসূলগণ। অত:পর জীবনের শেস বিন্দুপি বিলিয়ে দিয়ে বর্ণনাতীত ধৈর্য, অসীম মমতা আর ভালবাসা দিয়ে তারা রচনা করেন উম্মতের মুক্তির পথ। যাদের মুক্তির জন্যে আজীবন সঙগ্রামী তাঁরা- তাদের হাতেই হন নির্যাতিত, নিগৃহীত, রক্তাক্ত- এমনকি নির্বাসিতও। তবুও একচুল সরে দাড়ান নি এবং ধীরে ধীরে যারা প্রকৃতস্হ, সুস্হ, ভাল-মন্দ বিচার করতে সক্ষম তারা এসে শামিল হন নবী-রাসূলগণের মামিয়ানায়। শপথ নেন তারাও সত্য গ্রহণের, বাস্তবায়নের ও প্রচারের। আর যাদের ভিতর অন্ধ, হৃদয়কপাট চিররুদ্ধ, ভাল-মন্দ নির্ণয়ে অক্ষম তারা তেড়ে আসে। নিভিয়ে দিতে চায় সত্যের প্রদীপ। আচ্ছা, ওই মূর্খ অর্বাচীনদেরকে কি এই সুযোগ দেয়া যায়?? তাহলে তো সমগ্র পৃথিবী অন্ধতারে ডুবে যাবে। সুতরাং তখন বাধ্য হয়েই এই পৃথিবীর মালিক তার ঘর- এই বিশ্ব বসুন্ধতাকে আলোকিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published.