আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছেন-২

পূর্বের অংশ= আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছেন-১

ইবাদত-বন্দেগী :
মানব জীবনে ইবাদত-বন্দেগী সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরই জন্য মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, (তরজমা) আমি জিন্ন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত করবে (যারিয়াত : ৫৬)।
নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জ এ চারটিই প্রধান ইবাদত। এগুলো ইসলামের রুক্ন বা স্তম্ভ। এছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ গুরুত্বের কারণেই কুরআন-হাদীসে এসব বিষয়ে বিস্তারিত শিক্ষাদান করা হয়েছে এবং এর গুরুত্ব ও মর্যাদার প্রতি সুস্পষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও কুরআন-হাদীসে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাবধান করা হয়েছে যাতে কেউ এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও শিথিলতা- এ দুই প্রান্তিকতার কোনওটারই শিকার না হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তুমি নিজের নামায বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও না। বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে (বনী ইসরাঈল : ১১০)।

ইবাদতের জন্যই যেহেতু মানুষের সৃষ্টি তাই এ ব্যাপারে শিথিলতার অবকাশ না থাকাটা তো স্পষ্ট, যা বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। তা সত্ত্বেও কুরআন-হাদীসে বারবার সাবধান করা হয়েছে, যাতে চিন্তা-চেতনা ও ব্যবহারিকভাবে এ ব্যাপারে কেউ শিথিলতা প্রদর্শন না করে। বিশ্বাস ও চিন্তাগত শিথিলতা মানুষকে গোমরাহ বানিয়ে দেয়, এমনকি ইসলাম থেকে খারিজও করে দেয়। কেউ যদি এ চার মৌলিক ইবাদতের গুরুত্বকে খাটো করে দেখে এবং এর ফরযিয়াতকে অস্বীকার করে, তবে সে ঈমানহারা হয়ে যায়। আর তা স্বীকার করা সত্ত্বেও বাস্তবে পালন না করলে ফাসেক ও পাপিষ্ঠ বলে গণ্য হয়। উভয়ের জন্যই রয়েছে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি। অস্বীকারকারীর জন্য স্থায়ী শাস্তি, আর আমলে অবহেলাকারীর জন্য অস্থায়ী শাস্তি। সে শাস্তি থেকে বাঁচার লক্ষ্যে ইবাদতে শিথিলতা অবশ্য পরিত্যাজ্য। মানুষ যাতে সর্ববিধ শিথিলতা ত্যাগ করে ইবাদতকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় ও নিষ্ঠার সাথে তা পালনে রত হয়, সে জন্য ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও উৎসাহদান উভয় পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) যারা অহংকারে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ হয়, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে, লাঞ্ছিত হয়ে (মুমিন : ৬০)।
এবং ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) হে মুমিনগণ! তোমরা রুকূ কর, সিজদা কর এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর ও সৎকর্ম কর, যাতে সফলকাম হতে পার (হজ্জ : ৭৭)।
তাছাড়া আলাদাভাবে প্রত্যেকটি ইবাদত সম্পর্কেও বহু আয়াত ও হাদীস আছে, যা সবরকম শিথিলতা ত্যাগ করে আমলে যত্নবান হওয়ার তাগিদ ও উৎসাহ যোগায়।

ইবাদত-বন্দেগীতে শৈথিল্যেরর মত বাড়াবাড়িও নিন্দনীয়। এটাও বহুবিধ অনর্থের কারণ। বিশ্বাস ও চিন্তাগত বাড়াবাড়ি তো গোমরাহীর কারণ হয়ে যায় এবং অনেক সময় তা মানুষকে ইবাদতের প্রতি নিরুৎসাহীও করে তোলে। আর কর্মগত বাড়াবাড়ির সর্বাপেক্ষা বড় ক্ষতি হল ইবাদতের স্থায়িত্ব ও নিরবচ্ছিন্নতা নষ্ট হওয়া। কেননা ইবাদতে মাত্রাজ্ঞান হারালে ক্লান্তি ও অবসাদ অনিবার্য হয়ে পড়ে, যার পরিণাম ইবাদতকে বিদায় জানানো।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, (অর্থ) যে কেউ (সাধ্যাতীত আমলে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে) দীনকে কঠিন করে তোলে, দীন তাকে কাবূ করে ফেলে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৯

পক্ষান্তরে পরিমিতি রক্ষা করলে অবসাদ দেখা দেয় না, স্ফূর্তি বজায় থাকে। ফলে ইবাদত স্থায়ী হয়। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমলের এ পরিমাণই বহন কর যার ক্ষমতা তোমাদের আছে। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪৬৫)।
অর্থাৎ যা করতে সক্ষম তাই কর। সাধ্যের অতীতে লিপ্ত হতে যেও না। কেননা তা ধরে রাখতে পারবে না। পরিমিত পরিমাণ করলে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যেতে পারবে। আর আল্লাহ তাআলার কাছে সেই আমলই বেশি প্রিয় যা অল্প হলেও স্থায়ীভাবে করা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪৬৫)।

একবার তিনজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তাদেরকে যখন তা জানানো হল তারা অবাক হলেন। কারণ তার পরিমাণ তাদের ধারণা অপেক্ষা ঢের কম ছিল। তাদের ধারণা ছিল তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে দিবারাত্র নামায-রোযাতেই কাটান। কখনও রাতে ঘুমান না এবং কোনও দিন বিনা রোযায় কাটান না। পরক্ষণে তারা ভাবলেন, তাঁর তো এত বেশি ইবাদতের দরকার নেই। আল্লাহ তাআলা তাকে নিষ্পাপ রেখেছেন-তাঁর কোনো গুনাহ নেই। তাই খুব বেশি ইবাদত করার তাঁর দরকার নেই। অন্যরা তো তাঁর মত নয়। তাদের অনেক গুনাহ হয়ে যায়। তাই তাদেরই বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। সেমতে একজন বললেন, আমি রাতভর নামায পড়ব। কখনও ঘুমাব না। দ্বিতীয়জন বললেন, আমি জীবনভর প্রত্যেকদিন রোযা রাখব। তৃতীয়জন বললেন, আমি নারীসংগ পরিহার করে চলব। কখনো বিবাহ করব না। তাদের একথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কানে গেল। তিনি তাদেরকে বললেন,  “তোমরা এই-এই কথা বলেছ? শোন, আমি কিন্তু আল্লাহকে তোমাদের অপেক্ষা বেশি জানি। তাই তোমাদের অপেক্ষা তাকে ভয়ও বেশি করি, অথচ আমি কোন দিন রোযা রাখি এবং কোনও দিন রাখি না। আমি নামাযও পড়ি এবং ঘুমাইও আর আমি বিবাহও করেছি। (এটাই আমার সুন্নত ও নিয়ম)। যে ব্যক্তি আমার সুন্নত উপেক্ষা করে সে আমার দলের নয়”  (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫০৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪০১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩২১৯)।
মধ্যপন্থা ও পরিমিতি রক্ষা সম্পর্কে এ হাদীস এক সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও সীমালংঘন সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী। ইবাদতে পরিমিতি সম্পর্কে এরকম আরও বহু হাদীস আছে। সবগুলোর একত্রীকরণ উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য কেবল ইবাদত-বন্দেগীতে শরীয়তের বিশেষ মেযাজ। তথা মধ্যপন্থা অবলম্বনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা। সে জন্য দু’ একটি হাদীসের উদ্ধৃতিই যথেষ্ট।

প্রকাশ থাকে যে, এই পরিমিতি রক্ষার জন্য কোন্ ইবাদত কোন্ পর্যায়ের সে সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। যাতে অজ্ঞতাজনিত কারণে কোন ইবাদতকে তার আপন অবস্থান থেকে উপরে উঠানো বা নিচে নামানোর প্রান্তিকতা দেখা না দেয়।

ফরয-ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব-সাধারণভাবে ইবাদত এই চার স্তরের। এর প্রত্যেকটিকে আপন আপন স্থানে রাখাই পরিমিতিবোধের দাবি এবং সেটাই শরীয়তের যথার্থ অনুসরণ। ফরয-ওয়াজিবকে যেমন সুন্নত-মুস্তাহাবের স্তরে নামানো ঠিক নয়, তেমনি সুন্নত-মুস্তাহাবকেও ফরয-ওয়াজিবের মর্যাদা দেওয়া সংগত নয়। এতে দীনের প্রকৃত কাঠামো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তেমনি উম্মতের সম্প্রীতি নষ্টেরও পথ তৈরি হয়। যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের ফরযিয়াতকে অস্বীকার করা হয়, রমযানের রোযা, মালের যাকাত ও বায়তুল্লাহর হজ্জকে ঐচ্ছিক সাব্যস্ত করা হয় তবে তাতে দীনে ইসলামের অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ে। কেউ তা করলে তার নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বেশ আগে থেকেই এক শ্রেণীর লোক এজাতীয় চিন্তা পোষণের মাধ্যমে দীনের অবকাঠামোয় ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাতে শাশ্বত ও সুরক্ষিত দীন ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও তাদের নিজেদের ধামির্কতা যে বিধ্বস্ত হয়েছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেই সংগে বৃহত্তর মুসলিম জাতিসত্তার এই ক্ষতি হয়েছে যে, এর ফলে বিভক্তিতে মাত্রাযোগ হয়েছে, নতুন ফেরকার গোড়াপত্তন হয়েছে।

একই রকমের কুফল রয়েছে এর বিপরীত প্রান্তিকতার ভেতর। অর্থাৎ সুন্নত-মুস্তাহাবকে ফরযের মর্যাদা দিলে তাতেও দীনের অবকাঠামো বদলে যায়।
হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ. দীনের ভেতর রদবদল ঘটার বিভিন্ন কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখেন, ‘আরেকটি কারণ হচ্ছে বাড়াবাড়ি। অর্থাৎ এমন কঠিন কঠিন ইবাদত অবলম্বন করা, শরীয়ত যার আদেশ করেনি, যেমন সারা বছর রোযা রাখা, রাতভর ইবাদত করা, সংসার জীবন পরিহার করা, বিবাহ না করা এবং সুন্নত-মুস্তাহাবকে ওয়াজিবের মত গুরুত্ব দেওয়া। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, ১/১২০)

এ জাতীয় বাড়াবাড়ির ফলে বিভক্তিপ্রবণতাও উসকানি পায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে যেসব আত্মকলহের ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে এরকম বাড়াবাড়ির ভূমিকা নেহাত কম নয়। সন্দেহ নেই সুন্নত-মুস্তাহাবও দীনের একটা অংশ এবং ইসলামের পূর্ণাঙ্গরূপের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। কিন্তু সেই প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকবে তখনই যখন তাকে তার আপন অবস্থানে থাকতে দেওয়া হবে। বাইরের আলো বাতাস দ্বারা গৃহাভ্যন্তরকে স্বচ্ছন্দ ও স্নিগ্ধময় করে রাখার পক্ষে জানালা ও গবাক্ষের ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে ভূমিকার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে জানালা ও গবাক্ষকে যথাস্থানে যথারূপে রাখাই বাঞ্ছনীয়। নচেৎ তাকে যদি গৃহস্থদের চলাচল পথ তথা দরজার আকার-প্রকারে নিয়ে আসা হয়, তাতে দুয়েরই মহিমা ক্ষুণ্ণ হয়। উদ্দেশ্য ভেস্তে যায়। আলোচ্য ক্ষেত্রেও বিষয়টা সে রকমই। সুন্নত-মুস্তাহাবকে ফরয-ওয়াজিবের মর্যাদা দিলে এভাবেই উভয়ের মহিমা ক্ষুণ্ণ হয় এবং কার্যত উভয়টাই অস্তিত্ব-সংকটের শিকার হয়।

সুন্নত-মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার জন্য আরও একটা বিষয় জানা দরকার। তা হচ্ছে এর পদ্ধতিগত বৈচিত্র্য। শরীয়াতে এমন বহু কাজ আছে যা করার সুন্নতসম্মত পন্থা একাধিক-প্রতিটি পন্থা হাদীস দ্বারা প্রমানিত। তবে হাদীসের শাস্ত্রীয় নীতিমালার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করলে কোন্ পন্থা অপেক্ষা কোন্ পন্থা প্রাধান্য পায় তা নিয়ে মুজতাহিদগণের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, এক মুজতাহিদের কাছে এক পন্থা অগ্রগণ্য মনে হয়েছে তো অন্য মুজতাহিদের কাছে অন্য পন্থা। এ হিসেবে একজনের কাছে এক পন্থা আফযল (উত্তম), তো অন্যজনের কাছে অন্য পন্থা। পন্থা যে উভয়টিই জায়েয ও অনুসরণযোগ্য তা নিয়ে কোন বিরোধ নেই। বিরোধ কেবল অগ্রগণ্যতা নিয়ে। রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ থেকে মাথা তুলে হাত তোলা হবে কি হবে না, দোয়া কুনূত রুকূর আগে পড়া হবে, না পরে, আমীন উচ্চস্বরে বলা হবে, না নিচুস্বরে, ঈদের নামাযে ছয় তাকবীর বলা হবে, না বার তাকবীর ইত্যাদি বিষয়গুলো এ রকমই। সুতরাং এজাতীয় মাসাইলে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেওয়া খুবই জরুরি। অর্থাৎ আমি যে পন্থাই অনুসরণ করি না কেন, তাকে আফযলের বেশি কিছু ভাবব না এবং বিপরীত পন্থাকে অবৈধ ঠাওরাব না। আমার কাছে আমার অনুসৃত পন্থা যেমন উত্তম অন্যের কাছে দ্বিতীয় পন্থাও তেমনি উত্তম। কার্যত আমরা উভয়ই উত্তম পন্থার অনুসারী। সুতরাং কারও বিরুদ্ধে কারও আপত্তি তোলার সুযোগ নেই; বরং উভয়েই সুন্নত ও উত্তম পন্থার অনুসারী হিসেবে মহববত ও সম্প্রীতির সাথে সহাবস্থান করব। কিন্তু সাম্প্রতিককালে এসব মাসাইলে পরিমিতিবোধের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মহল বিশেষকে দেখা যাচ্ছে একটি পন্থাকে সুন্নত ও দ্বিতীয় পন্থাকে সুন্নতবিরোধী সাব্যস্ত করত জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। যেখানে উচিত ছিল এজাতীয় দ্বান্দ্বিক ও উসকানিমূলক তৎপরতা পরিহার করে উম্মতের মধ্যে তাওহীদী চেতনার বিস্তার, শিরকের মূলোৎপাটন, কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষা প্রচার, ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী প্রচারণার উপযুক্ত জবাবদান, নাস্তিক্যবাদের মুকাবিলা ও ইহুদী-খৃষ্টান চক্রের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখা। সেখানে তারা বিভক্তি-বিভাজনের ইস্যু তৈরির তৎপরতায় নিজেদের মূল্যবান সময় ও সম্পদ নষ্ট করছে।

আজ উম্মত কি কেবল ভূমি আগ্রাসনেরই শিকার?

তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি শত্রুকবলিত, শিক্ষাব্যবস্থা আদর্শচ্যূত, চিন্তা-চেতনা কুফরাচ্ছন্ন, অর্থ-সম্পদ শত্রুনিয়ন্ত্রিত, সমরশক্তি রুগ্ন ও ন্যুব্জ, আখলাক-চরিত্র বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত, তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পরনির্ভর, তাদের শিল্প-সাহিত্য অপসংস্কৃতি-জর্জর, রাজনীতি লক্ষভ্রষ্ট, রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্নীতিগ্রস্ত, তারা শক্তি মদমত্তদের ভূ-রাজনৈতিক চালিয়াতির শিকার, বহুজাতিক কর্পোরেট বাণিজ্যের শোষণে নির্জীব নিরক্ত, নানামুখী অপপ্রচার ও তথ্যসন্ত্রাসে দিশেহারা, স্যাটেলাইট সংস্কৃতির থাবায় বিসস্ত্র, তারা বহিঃশত্রুর অবিরাম হামলা ও গৃহশত্রুর নখরাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, বহুজাতিক আত্মকলহ ও বিরোধ-বিসংবাদে নাকাল-নাজেহাল। এহেন পরিস্থিতিতে উসকানিমূলক তৎপরতার মাধ্যমে শত্রুর এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা না রেখে দরকার উম্মতের অস্তিত্ব রক্ষা ও নবচেতনায় ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে সুচিন্তিত পরিকল্পনার আওতায় গঠনমূলক ও কল্যাণমুখী কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। কীভাবে বহিঃশত্রুর আক্রমণ মুকাবিলা করা যায়, কীভাবে বিক্ষিপ্ত-বিভক্ত উম্মতকে একাট্টা করা যায়। কোন্ পন্থায় তাদের বহুরৈখিক পশ্চাদপদতা কাটিয়ে হৃত-গৌরব পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং তাদের সকল শক্তি ও সম্ভাবনাকে বিনাশক ভূমিকা থেকে উদ্ধার করে নির্মাণমুখী করার উপায় কী এসবই এখন মুখ্য ভাবনার বিষয়। এ ভাবনার জন্য মানসিক ইতিবাচকতা ও দৃষ্টির প্রসারতা দরকার। দরকার একদেশোদর্শী মনোভাব পরিবর্তন করে উদার ও ভারসাম্যবান দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published.