পূর্ববর্তী অংশ=
ইসলামে বিদআতের উৎপত্তি যেভাবে-১
মধ্যমপন্থা ধরে রাখার উপায় :
শরীআতের বিধানাবলীতে মধ্যমপন্থী থাকার উপায় হচ্ছে বিধানাবলীর যথাযথ অনুসরণ। যে ব্যক্তি শরীআতের যতটা বিশুদ্ধ অনুসরণ করবে, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সে ততটাই ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে। কেননা শরীআতের বিধানই ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে থাকে। মানবস্বভাব যা দাবী করে, যা মানব স্বভাবের অনুকূল এবং যা দ্বারা মানব জীবন উপকৃত হয়, সেইমত বিধানই মধ্যমপন্থাসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ হয়ে থাকে। মানুষকে সেইমত বিধানই দেওয়া হয়েছে আর তারই নাম দ্বীন ইসলাম। ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) “তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত কর। অনুসরণ কর আল্লাহর (সৃষ্ট) স্বভাব-প্রকৃতির, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না”। (রূম : ৩০)
বস্ত্তত স্বভাব প্রকৃতি যা চায় প্রতিটি বিধানের মান ও পরিমাণ সে হিসেবেই স্থিরীকৃত। ফরয, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, হালাল-হারাম ইত্যাদি সে অনুসারেই সাব্যস্ত। প্রকতৃপক্ষে এ রকমই হওয়া স্বাভাবিক। কেননা মানুষের স্রষ্টা ভালোভাবেই জানেন মানুষের কল্যাণার্থে কি কি বিধান কী মান ও পরিমাণে দেওয়া চাই এবং কোন্ কোন্ বিধান তার স্বভাবের উপযোগী ও কী মাত্রায় উপযোগী। সুতরাং প্রতিটি বিধান তিনি সে হিসেবেই দিয়েছেন। নামায পাঁচ সংখ্যায় ফরয করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি সময়ে। তাতে রাকআত সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এবং কত রাকআত ফরয ও কত রাকআত সুন্নত তাও স্থির করে দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে রুকূ-সিজদার সংখ্যা ও পদ্ধতি এবং কার্যাবলীর ধারাবাহিকতা সবকিছুই সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে এর প্রতিটি বিষয়ই ভারসাম্যমান। না হেলাফেলা করার মত লঘু পর্যায়ের, না চাপবোধ করার মত গুরুভার। যাকাতের দিকে লক্ষ করুন- তা নির্দিষ্ট সম্পদে, সুনির্দিষ্ট মেয়াদে ও সুনির্দিষ্ট হারে ফরয করা হয়েছে এবং ক্ষেত্র বিশেষ ছাড়া অতিরিক্ত দান-খয়রাতকে ঐচ্ছিক পর্যায়ে রাখা হয়েছে। এমনিভাবে রোযা ও হজ্জের মান, পরিমাণ ও প্রাসঙ্গিক সবকিছুও স্থিরীকৃত। কোনওটিই কোনও রকম প্রান্তিকতা দোষে দুষ্ট নয়। বরং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যে মান ও পরিমাণ স্থির করা হয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে স্বভাবসম্মত। তার বেশি হলে অতিরিক্ত চাপ পড়ত আর কম হলে প্রয়োজনীয় মাত্রানুরূপ না হওয়ায় বিধান দ্বারা কাঙ্খিত সুফল পাওয়া অসম্ভব হত।
সুতরাং ইসলাম যে বিধান যে মান ও যে পরিমাণে দিয়েছে তা সম্পূর্ণ স্বভাবসম্মত ও যথাযথ মাত্রাযুক্ত। সে মান ও পরিমাণ রক্ষা করে বিধানাবলী পালন করা হলে তাই হবে ইসলামের যথার্থ অনুসরণ। তখন বাড়াবাড়িজনিত প্রান্তিকতার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে বিদআতে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এর জন্য কোন্ বিধান কী পর্যায়ের সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। আলহামদুলিল্লাহ উম্মতের ফুকাহায়ে কিরাম ফিকহ চর্চার মাধ্যমে সে বিষয়টাও আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রচুর বই-পুস্তক লেখা হয়েছে। ফিকহের যে-কোনও একটি বিশুদ্ধ রচনা আগাগোড়া পড়লে সহজেই সে ধারণা লাভ হয়ে যাবে।