ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর সুন্নত-১

ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর সুন্নত:

বর্তমানে আমাদের সমাজে নবআবিস্কৃত বিভ্রান্তি হলো ঈদের নামাজে অতিরিক্ত কত তাকবির হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একাধিক সহীহ হাদীসে এবং বহু সাহাবী ও তাবিয়ী এর ফতোয়া ও আমল দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দেওয়া সুন্নত। কিন্তু আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা দেশের বিভিন্ন স্থানে এ সুন্নতের বিরোধিতা করে মানুষকে এই ধারণা দেওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে যে, ১২ তাকবীর দেওয়াই সুন্নত, ছয় তাকবীর সুন্নতের পরিপন্থী। এখানে আমরা প্রথমে ছয় তাকবীরের হাদীসগুলো পেশ করবো। পরে বার তাকবীরের হাদীসগুলোর অবস্থা সম্পর্কে কিছু পর্যালোচনা তুলে ধরবো।

ছয় তাকবীর সম্পর্কিত হাদীস:
১. কাসেম আবূ আব্দির রহমান র. বলেন,
حدثني بعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم قال صلى بنا النبي صلى الله عليه و سلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف قال لا تنسوا كتكبير الجنائز وأشار بأصابعه وقبض إبهامه. أخرجه الطحاوي في شرح معاني الآثار ٢/٤٠٠ من طريق عبد الله بن يوسف عن يحيى بن حمزة عن الوضين بن عطاء عنه. قال الطحاوي: فهذا حديث حسن الإسناد وعبد الله بن يوسف ويحيى بن حمزة والوضين والقاسم كلهم أهل رواية معروفون بصحة الرواية ليس كمن روينا عنه الآثار الأول فان كان هذا الباب من طريق صحة الإسناد يؤخذ فان هذا أولى ان يؤخذ به مما خالفه غيره.
অর্থ: আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন নামায পড়লেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ভুলে যেয়োনা, জানাযার তাকবীরের মতো। এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।
(তাহাবী শরীফ, ২খ, ৪০০ পৃ)
তাহাবী র. বলেছেন, এই হাদীসটির সনদ চমৎকার। এর বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে হামযা, ওয়াদীন (وضين) ও কাসেম সকলেই হাদীস বর্ণনাকারী, সহীহ বর্ণনা পেশ করার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ। পূর্ববর্তী হাদীসগুলো (১২তাকবীরের হাদীস) যাদের সূত্রে বর্ণিত, এরা তাদের মতো সমালোচিত নয়। সুতরাং এই অধ্যায়ে যদি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসই গ্রহণ করতে হয় , তবে এই হাদীসটি গ্রহণ করাই শ্রেয়।

২ . মাকহুল র. বলেন,
أخبرنى أبو عائشة جليس لأبى هريرة ان سعيد بن العاص سال أبا موسى الأشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يكبر فى الأضحى والفطر فقال أبو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز. فقال حذيفة صدق. فقال أبو موسى كذلك كنت  أكبر فى البصرة حيث كنت عليهم. وقال أبو عائشة وأنا حاضر سعيد بن العاص. أخرجه أبو داود (١١٥٣) وسكت عنه هو والمنذري ورواه أحمد في مسنده ٤/٤١٦ وابن أبي شيبة (٥٧٤٤)
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রা. এর একজন সঙ্গী আবূ আয়েশা র. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল আস রা. (কুফার গভর্নর) এসে হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. ও হুযায়ফা ইবনুল  ইয়ামান রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় কিভাবে তাকবীর দিতেন? আবূ মূসা রা. বললেন, তিনি জানাযার মতো চার তাকবীর দিতেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আবূ মূসা সঠিক বলেছেন। আবূ মূসা রা. বললেন, আমি যখন বসরার গভর্নর ছিলাম তখন এভাবেই তাকবীর দিতাম। আবূ আয়েশা র. বলেন, এসময় আমি সাঈদ ইবনুল আসের কাছে উপস্থিত ছিলাম।
আবূ দাউদ শরীফ (১১৫৩), মুসনাদে আহমাদ ৪খ, ৪১৬পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং (৫৭৪৪)
ইমাম আবূ দাউদ র. ও মুনযিরী র. দুজনই এই হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে হাদীসটি তাদের নিকট আমলযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। নীমাবী র. বলেছেন, এর সনদ হাসান । (দ্র. আসারুস সুনান, ৩১৪ পৃ)
উল্লেখ্য, এই দুটি হাদীসে প্রথম রাকাতের তাকবীরে তাহরীমাসহ এবং ২য় রাকাতের রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তী হাদীসগুলো থেকেও একথা পরিস্কার বোঝা যায়।

৩. আলকামা র. ও আসওয়াদ র. বলেছেন,
كان ابن مسعود رض جالسا وعنده حذيفة وأبو موسى الاشعري رض فسالهما سعيد بن العاص عن التكبير في الصلاة يوم الفطر والاضحى ، فجعل هذا يقول : سل  هذا ، وهذا يقول : سل فقال له حذيفة :سل هذا – لعبد الله بن مسعود – فساله ، فقال ابن مسعود : يكبر اربعا ، ثم يقرا ، ثم يكبر ، فيركع ، ثم يقوم في الثانية فيقرا ثم يكبر اربعا ، بعد القراءة. أخرجه عبد الرزاق عن معمر عن أبي إسحاق عنها. ٣/٢٩٣-٢٩٤  وإسناده صحيح. وهذا وان كان موقوفا لكنه في حكم المرفوع لان مثل هذا لا يكون من جهة الرأي والقياس وقد وافق ابن مسعود جماعة من الصحابة.

অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রা. বসা ছিলেন। তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলেন হযরত হুযায়ফা রা. ও আবূ মূসা আশআবী রা.। তাঁদের দুজনকে হযরত সাঈদ ইবনুল আস রা. ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ইনি বলতে লাগলেন, ওনাকে জিজ্ঞেস করুন। আর উনি বললেন, এনাকে জিজ্ঞেস করুন। অবশেষে হযরত হুযায়ফা রা. তাঁকে বললেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করুন। এই বলে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে দেখিয়ে দিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। হযরত ইবনে মাসউদ রা. তখন বললেন, চার তাকবীর দেবে। অতঃপর কেরাত পড়বে। আবার তাকবীর বলে রুকু করবে, এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবে। পরে  কেরাত পড়বে। কেরাতের পরে চার তাকবীর দেবে।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৩খ. ২৯৩-৯৪পৃ.। এর সনদ সহীহএটি সাহাবীর বক্তব্য হলেও মূলত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরই বক্তব্য। কারণ কিয়াস ও যুক্তি দ্বারা এমনটা বলা অসম্ভব। তাছাড়া এক্ষেত্রে হযরত ইবনে মাসউদ রা. একা নন। অনেক সাহাবী তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।

৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,
التكبير في العيدين اربعا كالصلاة على الميت. رواه الطبراني في الكبير وقال الهيثمي: رجاله ثقات.
অর্থ: জানাযার নামাযের মতো দুই ঈদে চার তাকবীর হবে।
তাবারানী র. এটি উদ্ধৃত করেছেন। হায়ছামী র. বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগন সকলে বিশ্বস্ত।
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/৩৬৮)

৫. মাসরূক র. বলেন,
كان عبد الله يعلمنا التكبير في العيدين تسع تكبيرات  خمس في الاولى واربع في الآخرة ويوالى بين القراءتين . أخرجه ابن أبي شيبة – وإسناده حسن.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আমাদেরকে দুই ঈদের তাকবীর শেখাতেন। মোট নয় তাকবীর। প্রথম রাকাতে পাঁচ ও দ্বিতীয় রাকাতে চার। উভয় রাকাতের কেরাত একাধারে পড়বে। (অর্থাৎ উভয় রাকাতের কেরাতের মাঝে তাকবীর বলবে না। ইবনে আবী শায়বা এটি উদ্ধৃত করেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং  ৫৭৪৬)। এটির সনদ হাসান।

৬. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لما كان ليلة العيد ارسل الوليد بن عقبة إلى مسعود وأبي مسعود وحذيفة والاشعري فقال لهم ان العيد غدا فكيف التكبير فقال عبد الله يقوم فيكبر اربع تكبيرات ويقرا بفاتحة  الكتاب وسورة من المفصل ليس من طوالها ولا من قصارها ثم يركع ثم يقوم فيقرا فإذا فرغ من القراءة كبر اربع تكبيرات ثم يركع بالرابعة. أخرجه ابن أبي شيبة عن  هشيم عن أشعث عن كردوس عنه (٥٧٥٤) وأخرجه نحوه الإمام محمد في كتاب الآثار صـ ٢٠٥ وفي الحجة  على أهل المدينة صـ ٨٥ من طريق أبي حنيفة عن حماد عن إبراهيم عن عبد الله بن مسعود ورواه الطبراني في الكبير من طريق زكريا ابن أبي زائدة عن أشعث عن كردوس ، قال الهيثمي: رجاله ثقات، ورواه الطحاوي في شرح معاني الآثار من طريق أبي بكر ثنا  أبو داود قال ثنا هشام بن أبي عبد الله عن حماد عن إبراهيم عن علقمة بن قيس قال خرج الوليد بن عقبة بن أبي معيط على ابن مسعود وحذيفة والاشعري رضي الله عنهم فقال ان العيد غدا فكيف التكبير فقال ابن مسعود رضي الله عنه فذكر نحو ذلك وزاد فقال الاشعري وحذيفة رضي الله عنهما صدق أبو عبد الرحمن. ذكره ابن كثير بإسناد الطحاوي (تحت قوله: ان الله وملائكته يصلون على النبي) وقال: إسناد صحيح.
অর্থ: ওয়ালীদ ইবনে উকবা ঈদের রাতে হযরত ইবনে মাসউদ রা., আবূ মাসউদ রা. ও আবূ মূসা আশআরী রা. এর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আগামী কাল তো ঈদ, তাকবীর কিভাবে দিতে হবে? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, নামাযে দাঁড়িয়ে চার তাকবীর দেবে, পরে সূরা ফাতিহা এবং মুফাসসাল থেকে এমন একটি সূরা পড়বে যা বড়ও নয়, আবার ছোটও নয়। এরপর রুকু করবে। পরে (রাকাত শেষ করে) পুনরায় দাঁড়াবে। এবং কেরাত পাঠ করবে। কেরাত পাঠ শেষ  হলে চারটি তাকবীর দেবে এবং চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং  ৫৭৫৪; ইমাম মুহাম্মদ র. এর কিতাবুল আসার, পৃ,২০৫; কিতাবুল হুজ্জাহ , পৃ ৮৫; তাবারানী , আলমুজামুল কাবীর, (দ্র, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/৩৬৭) হায়ছামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগন বিশ্বস্ত; তাহাবী শরীফ ১খ, ৩১৯পৃ,। তাহাবীর সনদে ইবনে কাছীর র. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে। তিনি এটিকে সহীহ বলেছেন। (৩খ, ৫৬৪পৃ)
হযরত ইবনে মাসউদ রা. যেমন ফতোয়া দিতেন, নিজেও ঠিক সেভাবে আমল করতেন। নিন্মের হাদীসটি তার প্রমাণ।

৭. আলকামা র. ও আসওয়াদ র. বলেন,
…. ان ابن مسعود كان يكبر في العيدين تسعا تسعا اربعا قبل القراءة ثم كبر فركع وفي الثانية يقرا فإذا فرغ كبر اربعا ثم ركع . أخرجه عبد الرزاق ٣/٢٩٣ (٥٦٨٦) عن الثوري عن أبي إسحاق عنهما وابن أبي شيبة نحوه عن الشعبي (٥٧٤٧)  والإمام محمد في الحجة صـ ٨٥
অর্থ: হযরত ইবনে মাসউদ রা. দুই ঈদে নয়টি করে তাকবীর দিতেন। প্রথম রাকাতে কেরাতের পূর্বে চার তাকবীর বলতেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকুতে যেতেন। দ্বিতীয় রাকাতে আগে কেরাত পড়তেন। কেরাত শেষ হলে চার তাকবীর বলে রুকু করতেন।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৫৬৮৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৭৪৭;  কিতাবুল হুজ্জাহ, ৮৫পৃ.।

৮. কাতাদা র. বলেন,
عن جابر بن عبد الله وسعيد ابن المسيّب قالا تسع تكبيرات ويوالي بين القراءتين أخرجه ابن أبي شيبة (٥٧٥٦) وعبد الرزاق (٣/٢٩٦) عن إبراهيم بن يزيد عن جابر بن عبد الله وفيه : انه قال : التكبير في يوم العيد في  الركعة الاولى اربعا وفي الآخرة ثلاثا.
অর্থ: হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. ও সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব র. দুজনই বলেছেন, তাকবীর হবে মোট নয়টি আর উভয় রাকাতের কেরাত হবে লাগাতার।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং  ৫৭৫৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ৩খ, ২৯৬পৃ।

৯. আব্দর রাযযাক র.  বলেছেন,
أخبرنا إسماعيل بن أبي الوليد قال حدثنا خالد الحذاء عن عبد الله بن الحارث قال شهدت ابن عباس كبر في صلاة العيد بالبصرة تسع تكبيرات والى بين القراءتين قال وشهدت المغيرة بن شعبة فعل ذلك أيضا فسالت خالدا كيف فعل ابن عباس ففسر لنا كما صنع ابن مسعود في حديث معمر والثوري عن أبي إسحاق سواء. أخرجه عبد الرزاق ( ٥٦٨٩)   وأخرج نحوه ابن أبي شيبة عن هشيم عن خالد به (٥٧٥٧)
অর্থ:  ইসমাঈল ইবনে আবিল ওয়ালিদ র. খালেদ আল হায্যা র. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল হারেছ র. থেকে। তিনি বলেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস রা. বসরায় ঈদের নামাযে নয়টি তাকবীর দিয়েছিলেন এবং উভয় রাকাতের কেরাত লাগাতার পড়েছিলেন। ঐ নামাযে আমি তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম। হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা রা.ও অনুরূপ করেছিলেন। সে নামাযেও আমি উপস্থিত ছিলাম। ইসমাঈল র. বলেন, আমি খালেদ র. কে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত ইবনে আব্বাস রা. কিরূপ করেছিলেন? তখন তিনি আমাদের সামনে ব্যাখ্যা করলেন। মা’মার র. ও ছাওরী র. আবূ ইসহাক র. এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে ইবনে মাসউদ রা. এর নামাযের যে বিবরণ এসেছে, ইবনে আব্বাস রা. এর নামাযও ছিল ঠিক তদ্রুপ।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং  ৫৬৮৯; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৭৫৭। এই হাদীসের সনদ সহীহ।

১০. মুহাম্মদ ইবনে সীরীন র. হযরত আনাস  রা. সম্পর্কে বলেছেন,
انه كان يكبر في العيد تسعا فذكر مثل حديث عبد الله . أخرجه ابن أبي شيبة (٥٧٦٠)عن يحيى بن سعيد عن أشعث عنه. وإسناده صحيح.
অর্থ: তিনি ঈদের নামাযে নয়টি তাকবীর বলতেন। এরপর ইবনে সীরীন র. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এর নামাযের মতো করে বিবরণ দিলেন।
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৫৭৬০।
এই হাদীসের সনদ সহীহ।

১১. আব্দুর রাযযাক র. ইবনে জুরায়জ র. থেকে বর্ণনা করেছেন:
ان يوسف بن ماهك أخبرني ان ابن الزبير كان لا يكبر إلا اربعا في كل ركعة سواء ، يكبرهن في كل ركعتين ، سمعنا ذلك منه. المصنف ٣/٢٩١ (٥٦٧٦)
অর্থ: ইউসুফ ইবনে মাহাক র. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন  যে , আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়জ রা. প্রত্যেক রাকাতে চার তাকবীরই বলতেন, এর বেশী বলতেননা। এভাবে উভয় রাকাতেই তিনি তাকবীর বলতেন। আমরা তার কাছ থেকেই শুনেছি।
মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং  ৫৬৭৬।
এই হাদীসের সনদ সহীহ

মোট ছয়জন সাহাবীর হাদীস সহীহ সনদে আমরা উল্লেখ করলাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা., আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়র রা. আনাস রা. জাবের রা. ও মুগীরা ইবনে শো’বা রা.। আর তিনজন সাহাবী অর্থাৎ হযরত আবূ মাসউদ রা. আবূ মূসা আশআরী রা. ও হুযায়ফা রা. ইবনে মাসউদ রা. এর মতকে সমর্থন করেছেন। সুতরাং বলা চলে, নয় জন সাহাবী থেকে সহীহ হাদীসে ছয় তাকবীরের কথা বর্ণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, যেখানে নয় তাকবীর বলার কথা উল্লেখ আছে, সেখানে প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরসহ পাঁচ তাকবীর গণ্য করা হয়েছে। আর যে হাদীসে চার বলা হয়েছে সেখানে প্রথম রাকাতে রুকুর তাকবীর ও ২য় রাকাতে রাকাত শুরুর তাকবীরসহ চার ধরা হয়েছে।
ইমাম তাহাবী স্বীয় সনদে ইবরাহীম নাখায়ী র. থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উমর রা. এর আমলে জানাযার তাকবীর সংখ্যা নিয়ে সাহাবীগনের মধ্যে দ্বিমত দেখা দিলে উমর রা. সকলকে একত্রিত করে বললেন,
انكم معاشر اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم متى تختلفون على الناس يختلفون من بعدكم ومتى تجتمعون على أمر يجتمع الناس عليه فانظروا أمرا تجتمعون عليه فكانما أيقظهم فقالوا نعم ما رأيت يا أمير المؤمنين فأشر علينا فقال عمر رضي الله عنه بل أشيروا انتم على فانما انا بشر مثلكم فتراجعوا الأمر بينهم فأجمعوا أمرهم على ان يجعلوا التكبير على الجنائز مثل التكبير في الأضحى والفطر اربع تكبيرات فأجمع أمرهم على ذلك .
(الطحاوي  – باب التكبير على الجنائز كم هو) صـ ١/٣١٩

অর্থাৎ আপনারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী। আপনাদের দ্বিমত পরবর্তীদের উপর প্রভাব ফেলবে। আর আপনাদের ঐকমত্যের ফলে অন্যরাও একমত থাকবে। সুতরাং ভেবে চিন্তে আপনারা একটি বিষয়ে একমত হন। এ কথায় তিনি যেন তাঁদের জাগিয়ে তুললেন। তারা বললেন, হাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন, হে আমীরুল মুমিনীন। তবে এ বিষয়ে আপনি আপনার মতামত বলুন। তিনি বললেন, আপনারাই বরং আমাকে পরামর্শ দিন। কারণ, আমি তো আপনাদের  মতোই একজন মানুষ। পরে তাঁরা মত বিনিময় করে এ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছলেন যে, যেভাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় চার তাকবীর হয়ে থাকে, তেমনি জানাযার নামাযেও চার তাকবীর হবে। (তাহাবী শরীফ, ১খ, ৩১৯পৃ)
এ বর্ণনা থেকে বোঝা গেল, ঈদের নামাযে চার তাকবীর হওয়ার বিষয়টি ছিল সর্বজন স্বীকৃত

পরবর্তী অংশ=
ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর সুন্নত-২

Leave a Comment

Your email address will not be published.