কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণের নামে মনের পূজার শিক্ষা

সহীহ হাদীস

আব্দুল আজীজ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠ, মাদারটেক, খিলগাঁও মাঠে গত ২২ই মার্চ ২০১৪ ঈসাব্দ রোজ শনিবার বাদ আসর বয়ান শেষ করে মাত্র উঠলাম।
বয়ানে কথিত আহলে হাদীসদের ধোঁকাবাজীর বাক্স খুলার আগেই মাগরিবের আজান ধ্বনি ভেসে এল। সময় শেষ। নেমে এলাম ষ্টেজ থেকে।
নামতেই প্যান্ট শার্ট পরিহিত এক ভাই ছুটে এলেন। তাকিয়ে দেখলাম চেহারার রং কালো বর্ণ। গায়ের জামাটাও মনে হয় কালো। প্যান্টটা যে কালো সেটা মনে আছে পরিস্কার। চুলগুলো এলোমেলো।
এসেই বলতে লাগলেন-  `শায়েখ!আপনার বয়ান শুনলাম। খুবই ভাল লাগল। তবে উক্ত বয়ানের উপর আমার কিছু প্রশ্ন আছে’।
তখন মাগরিবের আজান হচ্ছে পাশের মসজিদে।
আমি বললাম নামাযের পর বলুন। আমিতো আছি।
নামাযের পর মসজিদের ভিতরেই এসে হাজির ভাইটি। বসলাম। সাথে সাথে আরো চারজন চলে এলেন। দুইজন এলেন মেহমানখানায় নেয়ার জন্য। আর দুইজন এলেন প্রশ্ন করার জন্য।
যাক ঐ কালো কাপড় পরিহিতা ভাইটি পরিচয় দিলেন তার নাম ফয়সাল।
ফয়সাল ভাই বললেন- শায়েখ![সম্বোধনটা আমার পছন্দের নয়, লোকটি বলেছিল তাই লিখছি। আমি কোন শায়েখ না] আমার প্রশ্নগুলো করবো?

আমি– অবশ্যই।

ফয়সাল– আপনি যে, বললেন আহলুল হাদীসরা গোমরাহ। অথচ মাসিক মদীনার সম্পাদক মুহিউদ্দীন খান সাহেবতো মাসিক মদীনায় আহলে হাদীসদের আহলে সুন্নাতের অনুসারী বলেছেন। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

আমি-আপনাদের মাঝে দল কয়টা? তিনি কোন দলটিকে আহলে সুন্নতের অনুসারী বলেছেন?

ফয়সাল– আমরাতো এক দলই। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহের অনুসারী।

আমি– আচ্ছা, তাইলে বলুনতো, আহলে হাদীস আন্দোলন বাংলাদেশ সঠিক না জমিয়তে আহলে হাদীস সঠিক? উনারাতো একদল আরেক দলকে ভ্রান্ত কয়? এর মাঝে কোনটি আহলে সুন্নাতের অধিকারী?

ফয়সাল– আমি তাদের কাউকে মানি না। আমি সৌদীর আহলে হাদীস।

আমি– তাহলে এই দুই দলই গোমরাহ?

ফয়সাল-আমি জানি না। আচ্ছা, ইমাম আবূ হানীফা রহঃ যে বলেছেন, ফার্সিতে কিরাত পড়লে নামায হয়, এর হুকুম কি?

আমি– আপনি কিন্তু আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। উত্তর দিলেন না। আপনার সব প্রশ্নের জবাবই আমি দেব। আপনার অবস্থান আগে পরিস্কার করেন।

ফয়সাল-আমি চার ইমামকেই মানি। তবে চার ইমামের মাঝে যার মত সহীহ মনে হবে তারটা মানি।কাউকে অন্ধভাবে মানি না।

আমি– আচ্ছা, ধরুন, বাংলাদেশে চারজন বিজ্ঞ সরকার স্বীকৃত ডাক্তার আছেন। একটি বিষয়ে চারজন চারটি প্রেসক্রিপশন লিখল।সেই চারটির মাঝে কোনটি সঠিক সেটি কি যাচাই করবে মুর্খ মুচি?

ফয়সাল– না, না মুচি কেন?

আমি– ভাল কথা, মুচি কি করে প্রেশক্রিপশনের ভুল ধরবে তাই না? তাহলে চারজন বিজ্ঞ মুজতাহিদ। যাদের সারা পৃথিবীর বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মুজতাহিদ বলে স্বীকৃতি দিলেন, তাদের চারটি মতের মাঝে আপনি একটিকে প্রাধান্য দিবেন, তো আপনি কি? আপনিতো আমাদের মত ঘোড়ার ডিম তাই না? মতগুলো মুজতাহিদের, যাচাই করবে মুর্খ?

ফয়সাল– আমি ঘোড়ার ডিম ঠিক আছে, কিন্তু বিন বাজও কি ঘোড়ার ডিম?

আমি– মজার কথা বললেন, তাহলে পৃথিবী বিখ্যাত ও স্বীকৃত মুজতাহিদের তাকলীদ রেখে আপনি ফেতনার যুগের বিন বাজের মুকাল্লিদ হতে চান?

ফয়সাল– না, না বিন বাজের মুকাল্লিদ হবো কেন? আমার বিবেক নেই। আমি বিবেক দিয়ে একটিকে প্রাধান্য দিব।

আমি– আপনি আগেই বলেছেন, বিজ্ঞ চার ডাক্তারের প্রেশক্রিপশনের ভুল-সঠিক যাচাইয়ের কোন অধিকার মুর্খ মুচির নেই, তাহলে বিজ্ঞ চার মুজতাহিদের সমাধানের ভুল-সঠিক ঘোড়ার ডিম মুর্খ কি করে করবে?

ফয়সাল– দেখুন, আল্লাহ আমাকে বিবেক দিয়েছে, তাই আমার বিবেক দিয়ে যেকোন একটিকে প্রাধান্য দিব।

আমার হাসি পেল। লোকটি নিজের বিবেকের অনুসরণ করবে। মানে মনের পূজা করবে। যখন যেটিকে ইচ্ছে সেটিকে মানবে, যেটিকে তার মন সায় দিবে না, সেটিকে ছেড়ে দিবে, এরকম মনের পূজার নাম দিচ্ছে আবার কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসরণ।

আমি বললাম-তাহলেতো আপনি বিবেকের অনুসারী হলে কুরআন ও হাদীসের অনুসারী রইলেন না।

ফয়সাল– না, না আমি কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারীই থাকি। আচ্ছা, শায়েখ! আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করলে সমস্যা কোথায়?

আমি– সমস্যাটা কোথায়? সেটা বয়ানে বলার সুযোগ পাইনি। সময় ছিল না। একেতো আপনার মত বিবেক পূজারী হয়ে যাবে সবাই। তখন একতা আর থাকবে না, শুধু ঝগড়া আর ঝগড়াই হবে মসজিদে। জামাতে নামায পড়া কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।
আচ্ছা, আমাকে বলুন, নামাযে রফয়ে ইয়াদাইন করার হুকুম সহীহ হাদীসে এসেছে না?

লোকটি– হ্যাঁ, এসেছে।

আমি– এটিতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল ছিল। আদেশতো ছিল না তাই না?

ফয়সাল-না, আদেশ ছিল না, আমল ছিল।

আমি-তাহলে বলুন রফয়ে ইয়াদাইন নামাযে করার হুকুম কি?

ফয়সাল– সুন্নত।

আমি– সুন্নত কাকে বলে?

ফয়সাল– যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেছেন এবং আদেশ দিয়েছেন সেটির নাম ফরজ, আর যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে করেছেন কিন্তু আদেশ দেননি সেটির নাম সুন্নত।

আমি– এই সংজ্ঞা কুরআনের কোন আয়াতে বা হাদীসে আছে?

ফয়সাল– এটি আমার নিজস্ব সংজ্ঞা।

আমি– তাহলে আপনি নিজেও শরয়ী বিধানের সংজ্ঞা বানাতে পারেন?

ফয়সাল– কেন আমার বিবেক নেই? আমার বিবেক বলছে এমন সংজ্ঞা হবে।

আমি– তাহলে আপনি আপনার বিবেকপুজারী। আপনার বিবেক যা বলবে আপনি তাই মানেন। কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারী কিন্তু থাকেননি, হয়ে গেছেন আপনার বিবেক অনুসারী।
আচ্ছা, আপনার এই সংজ্ঞা অনুপাতে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার হুকুম কি? বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জুতা পরিধান করে নামায পড়ার কথা এসেছে। জুতা খুলে নামায পড়ার কথা কোথাও আসেনি। তাহলে এটি কি সুন্নত নয়?

ফয়সাল– দেখুন, জুতা খুলে নামায পড়ার কথাও কিন্তু এসেছে অন্য হাদীসে।

আমি– বুখারী মুসলিমে আছে? বুখারী মুসলিমে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল কি সুন্নত নয়? তাহলে রফয়ে ইয়াদাইনের কি হবে? এটিওতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল। আবার জুতা পরিধান করে নামায পড়ার অবস্থাও বুখারী মুসলিমে বর্ণিত রাসূল সাঃ এর আমল।

ফয়সাল– হু, জুতা পরিধান করে নামায পড়া সুন্নত।

আমি– জুতা পরিধান করে নামায পড়া সুন্নত, কারণ আপনার সংজ্ঞা অনুপাতে যে কাজ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন, কিন্তু আদেশ দেননি, সেটি সুন্নত। সেই হিসেবে রফয়ে ইয়াদাইন করা তথা রুকুতে যেতে আসতে হাত উঠানোওতো একই মানের সুন্নত তাই না?

ফয়সাল– হু।

আমি– তাহলে একই মানের সুন্নত হওয়া সত্বেও আপনারা রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে এত আর্টিকেল লিখছেন, এত লেকচার দিচ্ছেন, এত বই লিখছেন, কিন্তু জুতা পরিধান করে নামায পড়া সুন্নত এর উপর আপনাদের ভিডিও নেই কেন? আর্টিকেল নেই কেন? বই নেই কেন? রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে মারামারি পর্যন্ত করতে প্রস্তুত। অথচ একই মানের সুন্নত হওয়া সত্বেও জুতা পরিধান করে নামায পড়ার সুন্নতের প্রতি এত উদাসিনতা কেন? আজকেওতো আপনি জুতা ছাড়াই নামায পড়েছেন সুন্নত তরক করে।

ফয়সাল– না, না ভিডিও আছে। আর আমিও জুতা পরিধান করে মাঝে মাঝে নামায পড়ি।

আমি– ভিডিও কোথায়? দেখানতো। আর মাঝে মাঝে পড়েন, মানে অধিকাংশ সময় এ সুন্নত ছেড়ে দেন, যেমন আজও ছেড়ে দিলেন, কিন্তু একই মানের সুন্নত রফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে মারামারি করতে প্রস্তুত। কখনোই তা ছাড়তে রাজি নয়। অথচ জুতা পায়ে নামায পড়ার সুন্নত প্রতিদিনই ছেড়ে দিচ্ছেন। কোন প্রচারণাও করছেন না এর জন্য। এ বৈষম্য করেন কেন? এটাইতো দলীল সুন্নতের উপর আমল নয়, ফিতনা করাই উদ্দেশ্য।

বেশ ভড়কে গেল ফয়সাল ভাই। এবার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেললেন। তিনি অবশ্য কথার মাঝখান দিয়ে বারবারই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন। যেমনটি নামধারী আহলে হাদীসদের মজ্জাগত স্বভাব। কিন্তু ওদের ধোঁকাবাজী সম্পর্কে জানা থাকায়, প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে পারেনি।
এবার যখন ধরা খেয়েই গেল। আমিও বুঝে গেলাম কিয়ামত আসলেও সুন্নতের সংজ্ঞা নিয়ে কুরআন ও হাদীস রেখে মনের পূজা করা এবং নিজের সংজ্ঞা অনুযায়ী একই মানের দুই সুন্নতের মাঝে এ বৈষম্যপূর্ণ আচরণের কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। তখন তাকে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করার সুযোগ দিলাম। যে সুযোগের অপেক্ষায় সে ছিল বেশক্ষণ ধরেই।
বলতে লাগল- শায়েখ! আপনি কিন্তু আমার প্রথম প্রশ্নের জবাব এখনো দেননি।

আমি– কোন প্রশ্ন?

ফয়সাল– ঐ যে বললাম, আপনাদের ফিক্বহে হানাফীর কিতাবে লিখা আছে যে, ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মতে ফার্সিতে কিরাত পড়লেও নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর অনেক বক্তব্যের বিরোধিতা তার দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ করেছেন। এর কি ব্যাখ্যা আছে?

আমি– ফিক্বহে হানাফী হল, মুলত ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর মূলনীতির আলোকে গবেষক দলের গবেষণার নাম। শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর বক্তব্যের নাম ফিক্বহে হানাফী নয়। এটি একটি গবেষক দলের পূর্ণাঙ্গ গবেষণার নাম। যেখানে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর নির্ধারণকৃত উসূলের আলোকে কুরআন সুন্নাহ গবেষণা করা হয়েছে। সেই উসূলের ভিত্তিতে একেক মাসআলায় ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর ছাত্রবৃন্দ অনেক সময় তার বক্তব্যের ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন। অনেক সময় দ্বিমত পোষণ করেছেন। দ্বিমত করুন, আর একমত হোন সর্বাবস্থায়ই উক্ত বক্তব্যটি ফিক্বহে হানাফী। কারণ উসূল তথা মুলনীতি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর থাকছে।

আচ্ছা, আমি আপনাকে প্রশ্ন করি- হাদীসের মাঝে কোন হাদীস আপনি মানেন? সহীহ হাদীস না জঈফ হাদীস?

ফয়সাল– সহীহ হাদীস।

আমি– কোথাও যদি সহীহ হাদীস ও জঈফ হাদীস এক মাসআলায় আসে, তাহলে সহীহ হাদীস রেখে জঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ?

ফয়সাল– না, জায়েজ না।

আমি– আচ্ছা, এখন যদি কোন ব্যক্তি সহীহ হাদীসের বিপরীত জঈফ হাদীস উপস্থাপন করে বলে যে, রাসূল সাঃ এর কথার কোন ঠিক নেই নাউজুবিল্লাহ। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেছেন, আর সাহাবায়ে কেরামও একেক কথা নিয়েছেন, তাই হাদীসের কোন ভিত্তি নেই। নাউজুবিল্লাহ, তাহলে এটি বলা ঠিক হবে না শয়তানী হবে?

ফয়সাল– অবশ্যই এটি খুবই জঘন্য কাজ হবে। জঈফ হাদীস সামনে এনে সহীহ হাদীস অস্বিকার করা বা হাদীস অস্বিকার করা কিছুতেই যৌক্তিক কথা হতে পারে না।

আমি– এবার তাহলে সহজে বুঝবেন। হাদীসের ক্ষেত্রে যেমন দুটি পরিভাষা আছে। তেমনি ফিক্বহের ক্ষেত্রে দু’টি পরিভাষা আছে। যথা-
১- রাজেহ, তথা প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য।
২- মারজূহ তথা অপ্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য।
যেটাকে আমরা অন্য ভাষায় প্রথমটিকে মুফতাবিহী, আর দ্বিতীয়টিকে গায়রে মুফতাবিহী বলে থাকি।

রাজেহ থাকা অবস্থায় মারজূহ বক্তব্যের উপর আমল করা জায়েজ নেই, তথা মুফতাবিহী বক্তব্য থাকা অবস্থায় গায়রে মুফতাবিহী বক্তব্যের উপর আমল করা জায়েজ নয়। যেমন সহীহ হাদীস থাকা অবস্থায় জঈফ হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়।
জঈফ হাদীস দেখিয়ে পুরো হাদীসকেই অস্বিকার করার মানসিকতা যেমন শয়তানী মানসিকতা, তেমনি মারজূহ তথা গায়রে মুফতাবিহী বক্তব্য দেখিয়ে পুরো ফিক্বহকে অস্বিকার করার মানসিকতাও শয়তানী মানসিকতা। বুঝতে পেরেছেন?

ফয়সাল– হু, বুঝতে পেরেছি।

আমি– তাহলে জেনে নিন। নামাযে কিরাত পড়া বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর উক্ত ব্যক্তব্যটি মারজূহ তথা গায়রে মুফতাবিহী বক্তব্য। মুফতাবিহী তথা রাজেহ বক্তব্য নয়। রাজেহ বক্তব্য হচ্ছে, নামাযে আরবীতেই কিরাত পড়তে হবে।
এখন এই মারজূহ বক্তব্য দেখিয়ে ফিক্বহে হানাফীকে অস্বিকার করা তেমনি শয়তানী, যেমন জঈফ হাদীস দেখিয়ে হাদীস অস্বিকার করার মানসিকতা শয়তানী।
আজকে আমার সময় নেই। পরে এক সময় আমাদের মাদরাসায় আসেন। বিস্তারিত কথা হবে ঠিক আছে?

ফয়সাল-শায়েখ! আপনার মাদরাসা কোথায়?

আমি– জামিয়াতুল আস’আদ আলইসলামিয়া রামপুরা।

মাদরাসার নাম শুনার সাথে সাথেই চমকে উঠলেন ফয়সাল ভাই। বলে উঠলেন জামিয়াতুল আস’আদ?

আমি– কেন চিনেন নাকি?

ফয়সাল– হু।

আমি– কিভাবে?

ফয়সাল– ফেইসবুকে।

আমি– আমাদের মাদরাসার ওয়েব সাইট দেখেছেন?

ফয়সাল– না।

আমি– জামিয়াতুল আস’আদের ওয়েব সাইট দেখার আমন্ত্রণ রইল।

এবার বিড় বিড় করে ফয়সাল সাহেব বলতে লাগলেন, জামিয়াতুল আস’আদের আপনি। ও…। আচমকা আবার বলতে লাগলেন- ভাই! আমি আসার সময় আমার হুজুরকে আপনার ওখানে নিয়ে আসবো।

আমি মুচকি হেসে বললাম- আপনার হুজুর আমাদের মাদরাসার নাম শুনে আসবে না। আপনাদের শায়েখরা আপনাদের মত সাধারণ মানুষদের সামনেই শুধু চ্যালেঞ্জবাজী আর গলাবাজী করে বেড়ায়। উলামায়ে কেরামের সামনে আসতে ভয় পায়।

ফয়সাল– কেন? কেন? আমি দেখি কালই নিয়ে আসবো।

আমি– আসলেতো ভাল। কিন্তু আসবে না এটি নিশ্চিত। আপনি কাগজ বের করুন আমি লিখে দেই।

ফয়সাল– তাহলে আমি একটি হল ভাড়া করি। সেখানে আপনি আসবেন?

আমি– অবশ্যই আসবো। কিন্তু এক্ষেত্রেও বলে দেই, সেখানেও আপনার শায়েখ আসবে না।

এবার বেটা বেশ ঘাবড়ে গেল।

বলতে লাগল– আপনি কী বলেন? আপনি এ ব্যাপারে পরিস্কার হতে চাই। আর আমি আহলুল হাদীসদের ইতিহাস পড়েছি, তারা এমন নয়। তারা অনেক সাহসী। তারা আসবেই। কিন্তু তাদের সিকিউরিটির দরকার।

আমি– তাই, যারা সাহসী তাদের সিকিউরিটি দিয়ে আনতে হয়?
পাশে ছিলেন এক মাওলানা। তিনি উঠলেন, ভাই! আপনি আপনার শায়েখকে আসতে বলুন। আমরা পুরো সিকিউরিটির ব্যবস্থা করবো। কোন সমস্যা নেই।

ফয়সাল– তাই? তাহলে আনবো।

আমি– কালই নিয়ে আসুন। এখানে মাহফিল হচ্ছে, মাইকে ঘোষণা করে দিতে বলে দেই। কাল এখানে আপনার আহলে হাদীস শায়েখের সাথে আহলে সুন্নাতের অনুসারীদের বাহাস হবে।

ফয়সাল– না, না, সেটার দরকার নেই। আপনি না বলেছেন আমি যেখানে বলি সেখানে যাবেন। তাহলে আমি হল ভাড়া করে আপনাকে জানাবো।

আমি-আপনি একটু আগে বললেন, আপনার শায়েখকে নিয়ে আসবেন। এখন বলছেন আমি যাব। ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই। আমার সিকিউরিটির দরকার নেই। দ্বীনের জন্য আমি রিস্ক নিতে রাজি আছি। তা আপনার শায়েখ আছে কোথায়? কাল একটু নিয়ে আসুন না।

ফয়সাল– ওনিতো সৌদী থাকে।

হাসি পেল। আপনি বললেন, তাকে যেকোন সময় নিয়ে আসবেন। এখন বলছেন সৌদী থাকে। তাহলে সে ইচ্ছে করলেই আসতে পারবে? এই আপনার শায়েখকে নিয়ে আসার কথা? ঠিক আছে আপনি হয়তো মাদরাসায় আসুন এক সময় আপনার শায়েখসহ। নইলে কোন অডিটোরিয়াম ভাড়া করে আমাদের খবর দিন। কিন্তু অডিটোরিয়াম ভাড়া আপনি করবেন না কোনদিন এটা একটি সত্য। আর যদি আমার একথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আপনি অডিটোরিয়াম ভাড়া করেনও, তাহলে আপনার ঐ কথিত শায়েখরা উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদানের মত ঈমানী বল পাবে না ইনশাআল্লাহ।

এরপর লোকটি বিদায় নিল। বলে গেল সে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জানাবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published.