তারাবীর নামায কি ৮ রাকাত? এ বেদআতের সূচনা কবে?

সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ ব্যপারে একমত যে, তারাবীর নামায ন্যন্যতম ২০ রাকাআত। সালফে-সালেহীন ও পূর্ববর্তীদের অনেকে (নফলসহ) ৩৬ বা ৮০ রাকাআত পড়তেন; কিনতউ সালফ ও খলফ তথা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী কোন ইমামই ২০ রাকাআতের চেয়ে কম পড়ার মত পোষণ করেন নি। এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ‘ইজমা’ (ঐক্যমত্য) রয়েছে। কেননা—

  • হাদীস শরীফে ২০ রাকাতের প্রমাণ হয়েছে।
  • খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত দ্বারাও ২০ রাকাত তারাবী ই প্রমাণিত।
  • মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুমের ইজমা (ঐক্যমত্য) এর আলোকেও তারাবীর নামা ২০ রাকাআত প্রমাণিত।
  • ইসলামের পুর্ণ্যযুগসমূহ তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈনের যুগে সমগ্রমুসলিম বিশ্বে ২০ রাকাআত তারাবীই পড়া হতো। এরপর থেকে লা-মাযহাবী ফেতনার সূচনাকাল পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ২০ রাকাত তারাবি পড়ার আমলই প্রচলিত ছিল। (৩ নং শিরোনামে দ্রষ্টব্য)।

এই ফেতনা শুরু হওয়ার পর থেকে কোন কোন মসজিদে (যেখানে তাদের কর্তৃত্ব বিদ্যমান) যদিও তারাবির নামায সংক্ষিপ্ত করে ৮ রাকাত পড়ার কুপ্রথা চালু হয়েছে, কিন্তু হক্কানী আলেমগণ সর্বদাই এর প্রতিবাদ করেছেন।  তাদের নিয়ন্ত্রিত হাতেগোনা গুটিকতক মসজিদ ছাড়া মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী সহ মুসলিম বিধ্বের সকল মসজিদে আজ পর্যন্ত সে ধারাই চলমান রয়েছে যা সাহাবায়ে কেরামের পুণ্যযুগ থেকে চলে আসছে।

 

১. ’তারাবীর নামায বিশ রাকাআত নয়’ এই বক্তব্য একটি অতি গর্হিত বেদআত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে নিয়ে তেরশো বছরের ( অর্থাৎ লা-মাযহাবী ফেতনার প্রদুর্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত) এই সুদীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোন একটি মসজিদের ব্যাপারেও তারা এই তথ্য  দিতে পারবে না যে, সেখানে তারাবীর নামায শুধু আট রাকাআত পড়া হতো।

২. একজন সাহাবী, তাবেঈ বা তাবে-তাবেঈর নামও উল্লেখ করা সম্ভব হবে না, যিনি আট রাকাআত তারাবীর প্রবক্তা ছিলেন বা বিশ রাকাত তারাবীর বিরোধীতা করতেন।
পরবর্তী যুগেও কিান সর্বজন-শ্রদ্ধেয় মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুফাসসির ও বুযুর্গ এমন পাওয়া যায় না, যিনি তারাবীর নাজায আট রাকাত সমাপ্ত করার প্রবক্তা ছিলেন বা বিশ রাকাত তারাবিকে অনর্থক বা বেদাত বলতেন।

৩. রোযা ও তারাবীহ বিধিবদ্ধ হওয়ার পর থেকে আহ পর্যন্ত মসজিদে হারাম বা মসজিদে নববীতে কোন এক রামযানে তারাবীর নামায শুধু আট রাকাত হয়েছে-এর স্বপক্ষে কোন সহীহ ও স্পষ্ট হাদীস বা ঐতিহাসিক বর্ণনা পেশ করা কোনক্রমেই সম্ভব না।

৪. ১২৮৪ হিজরী সনের দিকে প্রথমবার আকবরাবাদের একজন গাইরে মুকাল্লিদ মৌলভী যখন সাহাবায়ে কেরামের ইজমা এবং উম্মাহর আমলে মুতাওয়ারাসের বিপরীতে ৮ রাকাতের মত প্রকাশ করে তখনই স্হানীয় উলামায়ে কেরাম এর প্রতিবাদ করেন। তৎকালীন আরেক গাইরে মুকাল্লিদ আলেম মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন বাটালভী যখন আট রাকাআতের ফত্ওয়া দেন তখন তাদেরই একজন প্রথ্যাত আলেম গোলাম রাসূল ১২৯০ হিজরীতে এর প্রতিবাদে কিতাব লিখেন। তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীর পাশাপাশি তিনি এ কথা প্রমাণ করেন যে, ঐ সময়ও পুরো মুসলিম বিশ্বে তারাবীহ ২০ রাকাতেই পড়া হত। এত (কারো কোন দ্বিমত ছিলো না। (রাসায়েলে আহলে হাদীস: ২/২৯ ভুমিকা)

৫. তারাবীর নামায আট রাকাআতে সীমাবদ্ধ করার ধারণা এবং বিশ রাকাআতের বিরোধীতা করা যে শুধু একটি নব-আবিষ্কৃত বেদাআত, তাই নয়; বরং এটি শরীয়তের প্রমাণাদির সাথে সাংঘর্ষিকও বটে। অর্থাৎ

  1. এই মতটি তারাবীহ্সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা ও নির্দেশনার পরিপন্হী।
  2. এই মতটি খুলাফায়ে  রামেদীনের সুন্নত-বিরোধী।
  3. এই মতটি সাহাবায়ে কেরামের ইজমা (ঐকমত্য) এবং যুগযুগ ধরে চলে আসা আমলে মুতাওয়রাস তথা উম্মতের অবিচ্ছিন্ন কর্মধারার পরিপন্হী।
  4. অত্যন্ত আশ্চর্যজনক  ব্যাপার হল, এই মতটি এই নামাযের নামেরও পরিপন্হী। আমাদের লা-মাযহাবী বন্ধুরা যদি অন্তত এই বিষয়টিও অনুধাবন করতে সক্ষম হতেন যে, ‘তারাবীহ’ একটি আরবী শব্দ; যা ’তারাবীহা’ শব্দের বহুবচন। তারাবীহা বলা হয় প্রতি চার রাকাআত অন্তর বিরতিকে। যেহেতু এই নামাযে সর্বমোট ৫টি ’তারাবীহা’ বা বিরতি থাকে, তাই একে ‘তারাবীহ’ বলা হয়। যদি অন্য সব প্রমাণাদি বাদও দেওয়া হয়, তবু শুধু ’তারাবীহা’ শব্দটিই একথা প্রমাণ করে যে, এই নামাযে রাকাআত সংখ্যা আটের অধিক।
    কেননা আরবী ভাষায় বহুবচন কমপক্ষে ‘তিন’ বুঝিয়ে থাকে। যেহতেু আরবীতে দ্বিবচন ও বগুবচনের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ ব্যবহৃত হয়। ’তারাবীহা’ শব্দটির দ্বিবচন হলো  ‘তারাবিহাতান’ এবং বহুবচন ‘তারাবীহ’। অতএব ‘তারাবীহ‘ নামে নামকরণের কারণে অন্তত তিনটি ‘তারাবিহ‘ বা বিরতি অবশ্যই থাকতে হবে।  বলাবাহুল্য, আট রাকাআতে মাত্র  ‍দু’টি বিরতি হতে পরে। অতএব এই নামাযের রাকাআত সংখ্যা আট হলে এর নাম “‘তারাবিহ’ না হয়ে ‘তারাবিহাতান’ হত।

পরবর্তী অংশ=
আট রাকাআত তারাবি এর কোন সহীহ হাদীস এমনকি শরীয়তের কোন দলীল নেই

Leave a Comment

Your email address will not be published.