মদের উন্মুক্ত প্রদর্শনী কার স্বার্থে

মাস কয়েক আগে দেশের বাইরে সফর উপলক্ষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অতিক্রম করার সুযোগ হয়েছিল। স্বাভাবিক নিয়মে ইমিগ্রেশন এলাকায় প্রবেশের পর একটি দৃশ্য ও আয়োজন দেখে একদম চমকে উঠেছি। দৃশ্যটা ইমিগ্রেশন এলাকা থেকেই দেখা যাচ্ছিল। বোর্ডিংলাউঞ্জে গ্লাসের ভেতরে বড় বড় বোতল সাজিয়ে রাখা আছে। দেশের বাইরে বিভিন্ন বিমানবন্দরের ডিউটি-ফ্রি শপগুলোতে এ ধরনের বোতল আগেও চোখে পড়েছে। তখনই জানতে পেরেছি, এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতল। সে থেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যখনই কোনো পীড়াদায়ক পরিবেশে এ ধরনের বোতল চোখে পড়ে তখনই ভিতর থেকে খারাপ লাগতে শুরু করে। উদ্বেগ-ঘৃণায় শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যায়। এবারও সেটাই হল এবং বিভিন্ন কারণে একটু বেশি পরিমাণেই হল।

বোর্ডিংলাউঞ্জের যে জায়গায় বোতলগুলো সুসজ্জিত ভঙ্গিতে সাজিয়ে রাখা আছে সে জায়গাটা উড্ডয়নের অপেক্ষায় বিশ্রামরত যাত্রীদের চোখ বরাবর। ইচ্ছা করে তাকানোর দরকার নেই, বসে দৃষ্টি ফেললেই চোখ সেদিকে যাবে। ইমিগ্রেশন থেকেও দৃশ্যটা স্পষ্ট চোখে পড়তে থাকে। এভাবে অপেক্ষমান সব বয়সী নারী-পুরুষ, শিশুর সামনে প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের মতো দৃশ্যটি চোখে বিঁধতে থাকে। সুসজ্জিত গ্লাসের বক্সে সাজানো বিদেশি মদের বোতলগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামও পড়া যাচ্ছে। হুইস্কি, ভদকা ইত্যাদি। এর খুব কাছাকাছি জায়গাতেই নামাযের ঘর। নামাযের ঘর অতিক্রম করলেই ডিউটি-ফ্রি শপ। অন্য অনেক বস্তুর সঙ্গে মদের বোতলও সেসব শপে অবাধে বিক্রি হয় বলে শুনেছি। কিন্তু বোর্ডিংলাউঞ্জে প্রকাশ্যে মদের বোতল সাজিয়ে রাখার জায়গাটি কোনো দোকানের জায়গা নয়। এখানে কোনো কিছু বেচাকেনাও হয় না। উড়োজাহাজে উঠার আগে বিশ্রামরত যাত্রীদের সামনে তাহলে কেন এই মদ-প্রদর্শনী। অনেক কিছু ভাবার পরও বিষয়টি বুঝে আসেনি। এই এলাকায় তো দেশি-বিদেশি অন্য কোনো পণ্যেরও বিজ্ঞাপন দেখা যায় না। অতীতেও দেখা যায়নি। সংখ্যায় কম হলেও দেশের বাইরে আরো কিছু বিমানবন্দরে যাওয়ার সুযোগ তো হয়েছে; এমনকি অমুসলিম রাষ্ট্রেও। কিন্তু এ রকম জায়গায় এভাবে মদের বোতলের প্রদর্শনী আর কখনো চোখে পড়েনি। উৎকটভাবে মদ-প্রদর্শন কিংবা মদের জীবন্ত বিজ্ঞাপনের দৃশ্য এর আগে আমি আর দেখিনি।

যেসব গ্লাসে বোতলগুলো রাখা তার আশেপাশে কোথাও কিন্তু লেখা নেই যে ডিউটি-ফ্রি শপে ওগুলো পাওয়া যাবে। বাণিজ্যের কোনো সস্তা উস্কানির আলামতও নেই। এতেই প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, তাহলে এটা কেন করা হল? তবে কি মদকে বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রকাশ্য অংশ বুঝানোর জন্য এই চেষ্টা? অথচ সারা দুনিয়া এখন মদকে নিয়ে বিব্রতউদ্বেগে-সংকটে তারা মদ এড়িয়ে চলে, লুকিয়ে রাখে। সেখানে আমাদের এই মদ-ঘেঁষা সংস্কৃতির উন্মুক্ত প্রশদর্শনী জাতি হিসেবে আমাদের কতটা নিচু বানিয়ে ছাড়ে- একটু চিন্তা করে দেখা তো দরকার। যেসব দেশে মদ-পানীয় অবাধ, তারাই এখন আফসোসের মধ্যে আছে। আর সে ধ্বংসাত্মক জিনিসকেই গর্বের ভঙ্গিতে আমাদের এখানে প্রদর্শনী করা হচ্ছে। এতে জাতিকে কোন পরিচয়ে পরিচিত করা হচ্ছে? পৃথিবীর সবদেশের যাত্রীরা এ পথেই বিমানে উড়তে যান। তাদের চোখে এ দৃশ্যটি অবধারিতভাবে পড়ে। হজ্বযাত্রী এবং প্রায় প্রতিদিন শত শত উমরাকারীদেরও এ বোতলগুলোর পা ঘেঁষেই যেতে হয়। এমনকি মদ্যপান করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য বিদেশি হাসপাতালে যাওয়ার মুহূর্তে এই মাদক-প্রদর্শনীর মুখে পড়তে হয়। এতে করে মদের বিষে মুমূর্ষু মানুষটির ভিতরে আবারো মদ গিলার মতো তীব্র আগ্রহ জাগিয়ে তোলা হয়। লাঞ্ছনা, ক্ষতি ও বিড়ম্বনার তো শেষ নেই। তারপরও কেন প্রকাশ্যে এই মাদক-প্রদর্শনী?

দেশের আইনের দৃষ্টিতেও এটা মারাত্মক অপরাধ হওয়ার কথা। তবে কি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ও বোর্ডিংলাউঞ্জ অঞ্চল নো-ম্যানস ল্যান্ড? সেখানে কি যত্রতত্র মদের প্রদর্শন-বিরোধী দেশীয় আইনের কার্যকারিতা স্থগিত? ডিউটি-ফ্রি শপে মদবিক্রির যে সংস্কৃতি চালু আছে, বলা হয়ে থাকে সেটি কেবল বিদেশিদের জন্য। তাহলে ডিউটি-ফ্রি শপের বাইরে এই মদপ্রদর্শন কোন আইনের বলে- সেটা একদমই বোঝা গেল না। ২০০৭-২০০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তো বাসায় মদের বোতল রাখার অপরাধে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও শাস্তি হতে দেখেছি। এমনকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো কোনো ব্যক্তির বাসায় ফ্রীজে রক্ষিত ২/৪টি মদের বোতল বা বিয়ারের ক্যানের জন্য মামলা-মোকদ্দমার কথা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। তার মানে দাঁড়াল, শুধু উন্মুক্ত প্রদর্শন নয়, ‘সরকারি বিশেষ অনুমতি’ ছাড়া গোপনে নিজের বাসায় মদ-বিয়ার রাখাও বে-আইনি। তাছাড়া আইনের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হল পরিবেশগত উপযোগিতা। অনেক সময় বেশিরভাগ মানুষের কাছে অপছন্দনীয় কোনো কোনো জিনিস দুর্ভাগ্যজনকভাবে অল্প কিছু জনের পছন্দের বিষয়ে পরিণত হয়েও থাকে। সে ক্ষেত্রে সেই অল্প ক’জনের জন্য নিয়ন্ত্রিত ও গোপনীয়ভাবেই সে ব্যবস্থা আঞ্জাম দেওয়া হয়ে থাকে। যেন বেশিসংখ্যক মানুষের বিব্রত বা ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি না হয়। দ্বীনী মূলনীতি সামনে নিয়ে যারা এসব চিন্তা করেন না কিংবা যেখানে এসব বিষয়ে স্পষ্ট আইন নেই সেখানেও এ জাতীয় পরিবেশগত উপযোগিতার কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়। সেজন্যই প্রশ্নটা বড় হয়ে আসে যে মদের দোকান না হওয়া সত্ত্বেও এমন উন্মুক্ত মদের প্রদর্শনী কাকে দেখানোর জন্য এবং কী দেখানোর জন্য?

আমরা মুসলিম। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান। খানা-খাদ্য ও জীবন যাপনে আমরা ইসলাম নির্দেশিত হালাল-হারামে বিশ্বাস রাখি এবং মানি। ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো প্রকারের মাদক হারাম। কম-বেশি সবটুকুই হারাম কুরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় মদ হারামের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক জায়গায় মদ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে

رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّیْطٰنِ

‘শয়তানের গান্ধা কর্ম’ -সূরা মায়েদা ৫ : ৯০)।
এছাড়া বহু হাদীসেও মদের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাদীস শরীফে একবার মদপানকারীদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেত্রাঘাত ও জুতাপেটা কিছুই বাদ না যাওয়ার একটি বর্ণনাও রয়েছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্ট বলেছেন :
ما أسكر كثيره فقليله حرام
(যে বস্তু বেশি পরিমাণ খেলে নেশা হয় তার সামান্য পরিমাণ খাওয়াও হারাম।
-জামে তিরমিযী,হাদীস ১৮৬৫;সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস ৩৩৯৩;সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮১)

এমনকি মদের খালি পাত্র-বোতলগুলো ঘরে রাখার ব্যাপারেও স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণই হচ্ছে এসব বোতল চোখে পড়ার কারণে নিষিদ্ধ মদের প্রতি যেন আগ্রহ জেগে না ওঠে। বিমানবন্দরে মদের প্রদর্শনীতে আগ্রহ জাগ্রত করার সেই নিষিদ্ধ উপাদানটি পুরোপুরি বিদ্যমান।

মদ ও মাদক ছিল ইসলাম-পূর্ব আরবের জন্য বর্তমান ইউরোপের মতো সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বিশ্বমানবের মুক্তিদাতা মহান রাব্বুল আলামীনের এরশাদ ও নবীজীর ফরমান শুনে মুহূর্তের মধ্যেই আরবের মুসলমানরা তাদের মদের ঠিলা ও কলসিগুলো ড্রেনে-নালায় নিক্ষেপ করেন। তারা মদ-নিষিদ্ধের এ নির্দেশ মানতে বিলম্ব করেননি। পরের যুগেও মদের ব্যাপারে মুসলমানদের চেতনা ও অনীহা এরকমই হওয়ার কথা। ইসলামী বিধি-বিধানের যে অংশগুলো যুগ যুগ যাবৎ অন্যদের থেকে অনন্য ও প্রশংসিত, যে বিষয়গুলো অন্য জাতিরাও শ্রদ্ধার সঙ্গে বরণ করে নেয় এবং ইসলামী উম্মাহ যেসব বিধি-বিধান নিয়ে গর্ব করে থাকে- সেসবের মধ্যে মদের নিষিদ্ধতা অন্যতম। ধনদৌলতের দিক থেকে উন্নত জাতি ও দেশগুলো এই মদের যন্ত্রণা নিয়ে বর্তমানে কঠিন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। শুধু মদের কারণে ওইসব দেশে এবং তাদের অনুসারীদের মাঝে মুসলিম দেশেও লাখো লাখো মানুষ চরম পর্যায়ের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত। ইসলাম বহু আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে এবং দুনিয়াবাসীকে সতর্ক করেছে। অথচ জাতির সেই প্রশংসিত বৈশিষ্ট্যটিকেই আমাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিসর্জন দেওয়ার মহড়া শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মুসলিম জাতীয় বৈশিষ্ট্যের উজ্জ্বল অবলম্বনগুলো একে একে বিসর্জন দেওয়ার কোনো সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপেরই কি এটি আরেকটি অংশ? আল্লাহ জানেন।

আজকাল আরও শোনা যায়, দেশজুড়ে বহু পাঁচ তারকা হোটেল বিদ্যমান। গরিব দেশ হলেও অতি অল্পসংখ্যক ভোগবাদী মানুষের সুবিধার্থে তারকা হোটেলের নাকি অভাব নেই দেশে। জনশ্রুতি রয়েছে, সেসব হোটেলে রয়েছে মদের ছড়াছড়ি। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব, আসর, বার কিংবা হোটেলের নির্দিষ্ট কাউন্টারে সহজেই মদ পাওয়া যায়। সেগুলো অবশ্যই দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা করা উচিত। কোনোভাবেই এসব মদের আয়োজন সমর্থনযোগ্য নয়। তবুও লক্ষণীয় হচ্ছে, সেগুলোও চলছে গোপনে, চার দেয়ালের ভেতরে। অপরদিকে বিমানবন্দরে মদের প্রদর্শনীটা হচ্ছে উন্মুক্ত ও প্রকাশ্যে। দেশি-বিদেশি বিমানযাত্রীদের সামনে। দেশের প্রধান বিমানবন্দরটিকে বলা হয় ওই দেশের চেহারা বা মুখ। সেখানে এরকম বিদেশি মদভর্তি মদের বোতলের একটি প্রদর্শনী দেশের কোন চেহারার পরিচয় তুলে ধরছে? দেশের মুখে একটি জাতির সভ্যতার অংশ বা সংস্কৃতির ছায়া তুলে ধরার পরিবর্তে মদের পসরা কেন সাজানো হলো-বুঝা মুশকিল। এভাবে আমরা দেশটিকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছি? কোন পথে হাঁটছে আমাদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতা? আমাদের এই প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির পরিবর্তিত নামকরণ করা হয়েছে হযরত শাহজালার রাহ.-এর মতো এদেশের কিংবদন্তিতুল্য মহান সাধক ওলিআল্লাহর নামে। সেই নামের বিমানবন্দরে মদপ্রদর্শনীর এই তামাশা করার কী দরকার! আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অবিলম্বে দেশের ধর্ম, সভ্যতা, সংস্কৃতির পরিপন্থী এ মাদক-প্রদর্শনী সরিয়ে নিতে অনুরোধ করছি। আর আমাদের বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপগুলোও মুসলিম প্রধান দেশের বৈশিষ্ট্যে সজ্জিত হওয়া দরকার। সেখানে মদ বিক্রি না হলে কি দেশের অর্থনীতির কোনো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে? মদসহ যে কোনো হারাম বস্তু সেখানে বর্জনীয় হওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলোর দিকে দ্রুত নযর দেবেন বলে আশা করি।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, হাদীসে মদকে সকল অশ্লীলতার মূল আখ্যা দেয়া হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী হযরত মুআয রা.-কে যে বিশেষ দশটি অসিয়ত করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল ولا تشربن خمرا فإنه رأس كل فاحشة অর্থাৎ কখনো কোনো প্রকারের মদ পান করবে না। কারণ এটি সকল অশ্লীলতার মূল।

প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে চাই। তা হচ্ছে ‘এনার্জিড্রিংক’। বাজারে এখন এজাতীয় পানীয়ের সয়লাব। কয়েকটি কোম্পানী ব্যাপক বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে শিশু, তরুণ ও যুবকদের এসবের প্রতি আসক্ত করে তুলছে। অথচ অভিজ্ঞ মহল অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন এগুলোতে এ্যালকোহল রয়েছে। কয়েকবার খবরের কাগজ এ বিষয়ক বিস্তারিত প্রতিবেদনও ছেপেছে। কিন্তু তাতে এসব প্রস্তুতকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কারোরই টনক নরছে বলে মনে হয় না। কয়েক বছর আগে একবার ক্রাউন ও হান্টার নামে দুটি এ্যালকোহল মিশ্রিত পানি বাজারজাত করেছিল একসময় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ‘হালাল’ সাবান প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান। অনেকেই তখন ব্যাঙ্গ করে বলেছিল ‘হালাল’ সাবানের পর এবার কি তারা ‘হালাল মদ’ বিক্রি শুরু করল। নাউযুবিল্লাহ। আসলে এভাবে অল্প অল্প করেই মাদকে আসক্ত করে তোলা হয় একটি প্রজন্মকে। তখন অবশ্য ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ক্রাউন ও হান্টার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পণ্য দুটি বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সরকারও মাদক বিষয়ক কিছুটা কঠোর আইন করে। কিন্তু তারপরেও সরকারী আইনে শরীয়ার সাথে সংঘর্ষ রয়েছে। কারণ, উলামায়ে কেরামকে পুরোপুরি আমলে না নিয়েই তখন আইন করা হয়েছিল যে, খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়তে ০.৫% এ্যালকোহল দেয়া যাবে। অথচ ইসলাম বলছে এক ফোটা মাদকও খাদ্যে মেশানো যাবে না। ما أسكر كثيره فقليله حرام ‘যে জিনিসের বেশি পরিমাণে খেলে নেশা সৃষ্টি হয় তার সামান্য পরিমাণও হারাম’।

বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচন উপলক্ষে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের সমস্যাবলী ছাপা হচ্ছে। মানুষের মতামতের সাথে সাথে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের   উন্নয়ন-ভাবনাও প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ এলাকাতেই বড় সমস্যা হিসাবে উঠে আসছে মাদকের নাম। এলাকাবাসী মাদক ও মাদকাসক্তদের নিয়ে ব্যপক অভিযোগ করছে। অবিষ্যত জনপ্রতিনিধিগণ তা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজধানী ও অন্যান্য নগরে এত বেশি আকারে মাদকের ছড়াছড়ি হল কেমন করে? তাহলে কি মানুষের মুখে মুখে যা শোনা যায় তা-ই ঠিক যে, এসবের মধ্যে বড় টাকাওয়ালা ও বড় বড় ক্ষমতাবানদের শক্ত হাত রয়েছে। আমরা এসবে বিশ্বাস করতে চাই না। আমরা আহ্বান জানাতে চাই যে, জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেয়া দরকার তার মধ্যে একটি বড় কাজ হল, মদ ও মাদকের পুরো নিয়ন্ত্রণ। এনার্জিড্রিংক বা যে নামেই হোক কোনো ধরনের মাদকজাতীয় দ্রব্য যেন গোপনে বা প্রকাশ্যে এদেশে বাজারজাত না হয়- সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট মহলের জন্য অতি জরুরি। সভ্য জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে চাইলে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে মাদকের ধ্বংসাত্মক ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে সকল প্রকারের মাদক বেচা-কেনা ও প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। চাই তা দামী হোক অথবা কমদামী। অভিজাত এলাকায় হোক অথবা সাধারণ বস্তিতে। আর নিবন্ধের শেষে আবারো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন লাউঞ্জে সাজিয়ে রাখা মদের বোতলগুলো সরিয়ে নেয়া হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published.