মেসওয়াক করার ফযীলত

মেসওয়াক

মেসওয়াক করার ফযীলত:

একথা আমাদের সকলের জানা যে, অধিকাংশ পেটের অসুখ দাত ময়লা থাকার কারনে হয়। তাছাড়া দৃষ্টি শক্তির সাথেও দাঁতের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের মতে ফ্লোরাইড ও অন্যান্য উদ্ভিদ জাতীয় পদার্থ দাঁত ও মাঢ়ী সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বাজারের সকল টুথপেষ্ট ও টুথ পাঊডার প্রস্তুত কারক কোম্পানী টুথপেষ্টে ফ্লোরাইড ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করে থাকেন। আমরা এসকল দ্রব্য আমরা অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে গর্বের সাথে ব্যবহার করে থাকি। অথচ দাঁতের সুরক্ষার জন্য ফ্লোরাইড সহ অন্যান্য সকল উপাদান মেসওয়াকের মাঝে প্রচুর পরিমানে আছে।

 

আমাদের অনেকেরই মাঝে একটা ভুল ধারনা আছে যে মেসওয়াক করা খালি পুরুষ ব্যক্তিদের জন্য সুন্নত। এটা আসলে ভুল। সকল উম্মুল মুমেনীনরা ও সকল মহিলা সাহাবীরা মেসওয়াক করতেন। মেসওয়াক করা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই সুন্নত।

শরীয়তের পরিভাষায় ৫ ওয়াক্ত সালাত/নামাযের পূর্বে, ঘুম থেকে উঠার পর ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে, ভাত খাওয়ার পরে যে কোন কাঁচা গাছের ডাল দ্বারা দাত পরিস্কার করাকে মেসওয়াক করা বলে।  আপনি যদি টুথপেষ্ট দিয়ে দাত ব্রাশ করেন তাইলে শুধু মাত্র মুখ পরিস্কার করার সুন্নত আদায় হবে কিন্তু টুথপেষ্ট দ্বারা দাত ব্রাশ করার আগে বা পরে আপনি যে কোন কাচা গাছের ডাল দ্বারা মেসওয়াক করলে মুখ পরিস্কার করা ও মেসওয়াক করা উভয়েরই সুন্নতই আদায় হবে। পিলু/আরক গাছ, যয়তুন গাছের কাঁচা ডাল দ্বারা মেসওয়াক করা সুন্নত। উপমহাদেশে সাধারণত নিম গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে পাকিস্তান, সৌদিআরব থেকে আমদানীকৃত যয়তুন, পিলু গাছের মেসওয়াক পাওয়া যায়। এদের মাঝে প্যাকেট বিহীন যে যয়তুন গাছের মেসওয়াক টা বিক্রি করা হয় দাম ২০ টাকা আপনারা এটা দ্বারা আপনারা মেসওয়াক করবেন। এটা খুব ভাল আমি নিজেও এটা দ্বারা মেসওয়াক করি। প্রত্যেক হাদিসের কিতাবে মেসওয়াক অধ্যায় নামক একটা স্বতন্ত্র অধ্যায় রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “ যে নামাযের জন্য মেসওয়াক করা হয় তা মেসওয়াক বিহীন নামায অপেক্ষা ৭০ গুন বেশি উত্তম।” (বায়হাকী, মা’আরেফুল হাদীস) রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন – “ যদি আমার উম্মতের জন্য কঠিন হওয়ার আশংকা না থাকতো তবে আমি তাদের উপর প্রত্যেক নামাযের পূর্বে মেসওয়াক করা ওয়াজিব করে দিতাম। ” (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন- “রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম যে কাজটি করতেন, তা ছিল মেসওয়াক করা। তিনি ওযূ ও নামাযের সময়ও মেসওয়াক করতেন। ”

রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন- “ জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম যখনই আমার কাছে আসতেন, তখনই মেসওয়াক করার কথা বলতেন।  এ বারংবার তাগিদের কারণে আমার আশংকা হয় যে, আমি আমার মুখের অগ্রভাগ মেসওয়াক করতে করতে ক্ষয় না করে ফেলি”- (মুসনাদে আহমদ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মৃত্যুর কিছুক্ষন পূর্বেও মেসওয়াক করেছেন।  সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর কিছুক্ষণ পূর্বে  আব্দুর রহমান ইবনে আবুবকর রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি কাচা মেসওয়াক হাতে নিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কে দেখতে আসেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দৃষ্টি বারবার ঐ মেসওয়াকে দিকে পড়তে লাগলো। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা তখন বুঝতে পারলেন যে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেসওয়াক করতে চাচ্ছেন। আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা তখন ঐ মেসওয়াকটাকে চিবিয়ে নরম করে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখে দিলেন। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন- “ সেই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার সকল স্তুতি ও প্রশংসা যিনি তাঁর রাসুলের অন্তিম মুহূর্তে তার ও আমার মুখের থুথু মিলিত করেছেন। [ মুসনাদে আহমদ ]

তাইলে আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি যে মেসওয়াক করা কতবড় একটি সুন্নত যে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মৃত্যুর কিছুক্ষন পূর্বেও মেসওয়াক করেছেন। আশা করি আপনারা আজকে থেকে সবাই নিয়মিত ভাবে মেসওয়াক করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published.