হাদীস দ্বারা প্রমাণিত শবে বরাতের ফযীলত

ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪ই শা‘বান দিবাগত রাতকে শবে বরাত নামে আখ্যায়িত করা হয়। আহলে গায়রে মুকাল্লিদ ও আহলে হাদীসদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে যে সকল হাদীস রয়েছে সবগুলোই মওযূ ও জাল হাদীস। এ ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে তারা শবে বরাতের ফযীলতকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। এমনকি এ রাতে জাগরণ করে ইবাদত-বান্দেগী, যিকির-আযকার, তিলাওয়াতসহ সকল নফল ইবাদত করাকে বিদ‘আত ও কুসংস্কার মনে করে।

অথচ হাদীসের কিতবসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং সাহাবা, তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন ও সলফে সালেহীনদের আমলের সাথে অসঙ্গতি ও বিরোধপূর্ণ্।

মূলত: সাহাবায়ে কিরাম থেকে বিভিন্ন সূত্রে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীস হাদীসগ্রন্থসমূহে বিদ্যমান। যেসব হাদীসের কোনোটি সহীহ, কোনোটি হাসান এবং কোনোটি যঈফ স্তরের। উল্লেখ্য যে, হাদীস বিশারদগণের মতে যঈফ হাদীস অত্যধিক দুর্বল না হলে ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তার উপর আমল করা যায়। সুতরাং শবে বরাতের ফযীলতকে ভিত্তিহীন বলার কোনোই অবকাশ নেই।

যেসব সাহাবী থেকে শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন:
(১) হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.।
(২) হযতর আলী রা.।
(৩) হযরত আয়শা রা.।
(৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ‘মর রা.।
(৫) হযরত আবু হুরায়রা রা.।
(৬) হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রা.।
(৭) হযরত আউফ ইবনে মালিক রা.।
(৮) হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রা.।
(৯) হযরত আবু ছা‘লাবা খুসানী রা.।
(১০) হযরত কাছীর ইবনে মুররা রা.।

নিম্নে সাহাবায়ে কিরাম থেকে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস স্তরসহ পেশ করা হচ্ছে।

প্রথম হাদীস:

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَطَّلِعُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى خَلْقِهِ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»

তরজমা: হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করেন এবং সকলকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক ও হিংসুকদেরকে ক্ষমা করেন না। (আল-মু‘জামুল কাবীর লিত-তাবারানী, হাদীস নং ২১৫; আল-মু‘জামুল আওসাত, হাদীস নং ৬৭৭৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৫৬৬৫; শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৫৫২)

হাদীসটির স্তর:

আলোচ্য হাদীসটির স্তর বর্ণনা করতে গিয়ে আহলে হাদীসদের গুরু ও বিশিষ্ট মুহাদ্দিস নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. বলেন:

حديث صحيح، روي عن جماعة من الصحابة من طرق مختلفة يشد بعضها بعضا وهم معاذ ابن جبل وأبو ثعلبة الخشني وعبد الله بن عمرو وأبي موسى الأشعري وأبي هريرة وأبي بكر الصديق وعوف ابن مالك وعائشة.

তরজমা: হাদীসটি সহীহ ও বিশুদ্ধ। সাহাবায়ে কিরামের একটি বড় জামাত থেকে বিভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত। যা পরস্পরকে শক্তিশালী করে তোলে। যেসব সাহাবী থেকে হাদীসটি বর্ণিত, তাঁরা হচ্ছেন হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রা., হযরত আবু ছা‘লাবাহ খুসানী রা., হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা., হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রা., হযরত আবু হুরায়রা রা., হযরত আবু বকর রা. ও হযরত আয়েশা রা.।

দ্বিতীয় হাদীস:

عَنْ كَثِيرِ بْنِ مُرَّةَ الْحَضْرَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ فِيهَا الذُّنُوبَ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»

তরজমা: হযরত কাছীর ইবনে মুররা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,  ‘আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাতে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন‘।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ২৯৮৫৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ৭৯২৩, শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৫৫০)

হাদীসটির স্তর:

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি সহীহ। সহীহুল জামে, হাদীস নং ৪২৬৮।

তৃতীয় হাদীস:

عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اطَّلَعَ اللهُ إِلَى خَلْقِهِ فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِ، وَيُمْلِي لِلْكَافِرِينَ، وَيَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتَّى يَدَعُوهُ “

তরজমা: হযরত আবু ছা‘লাবাহ আল খুশানী রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাতে স্বীয় বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দান করেন। অতপর মুমিন বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন এবং কাফিরদেরকে সুযোগ দান করেন। আর বিদ্বেষপোষণকারীদেরকে তাদের বিদ্বেষ পরিত্যাগ করা পর্যন্ত অবকাশ দেন।
(শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৫৫১; আল-মু‘জামুল কাবীর লিত-তাবারানী, হাদীস নং ৫৯০, ৫৯৩, ৬৭৮; মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হাদীস নং ১২৯৬২)

হাদীসটির স্তর:

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি হাসান। সহীহুল জামে, হাদীস নং ৭৭১।

চতুর্থ হাদীস:

عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ»

তরজমা: হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রা. রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম. ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাতের বেলায় সৃষ্টিজীবের প্রতি রহমতের দৃষ্টিপাত করেন। অতপর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সকল মাখলুকদেরকে ক্ষমা করে দেন।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১৩৯০)

হাদীসটির স্তর:

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি হাসান। সহীহুল জামে, হাদীস নং ১৮১৯।

পঞ্চম হাদীস:

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ نَادَى مُنَادٍ: هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ، هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ فَلَا يَسْأَلُ أَحَدٌ شَيْئًا إِلَّا أُعْطِيَ إِلَّا زَانِيَةٌ بِفَرْجِهَا أَوْ مُشْرِكٌ “

তরজমা: হযরত উসমান ইবনে আবীল আস রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন শা‘বান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাত আসে তখন জনৈক ফিরিশতা আল্লাহর পক্ষ হতে এ বলে আহ্বান করতে থাকে, আছো কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী যাকে আমি ক্ষমা করে দিবো? আছো কোনো বঞ্চনাকারী যাকে আমি দান করবো? অতপর যে ব্যক্তি যা চায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাই দান করেন। কিন্তু ব্যভিচারিনী এবং মুশরিকদেরকে দান করেন না
(শু‘আবুল ঈমান লিল বাইহাকী, হাদীস নং ৩৫৫৫)

হাদীসটির স্তর:

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি যঈফ। যঈফুল জামে, হাদীস নং ৬৫৩।

ষষ্ঠ হাদীস:

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَغْفِرُ لأَكْثَرَ مِنْ عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ.

তরজমা: হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। (দীর্ঘ হাদীসে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম. ইরশাদ করেন। শাবান মাসের চৌদ্দতম দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে তাশরীফ আনেন এবং বনু কালবের গোত্রের ভেড়া-বকরির পিঠের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।
(তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ৭৩৯)

হাদীসটির স্তর:

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি যঈফ। যঈফুল জামে, হাদীস নং ৬৫৪, ১৭৬১।

দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়ার কারণে বাকী হাদীসগুলো আর পেশ করা হলোনা। নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. গায়রে মুকাল্লিদ ও আহলে হাদীসদের বিশিষ্ট আলেম হওয়ার কারণে স্তর বর্ণনার ক্ষেত্রে স্রেফ তাঁর মন্তব্যকেই তুলে ধরা হয়েছে। না হয় এসব হাদীসের ব্যাপারে অন্যান্য মুহাদ্দিসদেরও মন্তব্য রয়েছে

উপরে বর্ণিত হাদীসগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শবে বরাত সম্পর্কীয় হাদীসগুলো বিভিন্ন স্তরের। মুহাদ্দিসীনে কিরাম কেউ এই হাদীসগুলোকে জাল হাদীস বলেননি। বরং কোনোটি সহীহ, কোনোটি হাসান এবং কোনোটি যঈফ। সুতরাং এর দ্বারা শবে বরোতের ভিত্তি ও ফযীলতের প্রমাণ সাব্যস্ত হয়। এসব হাদীস থাকা সত্বেও যারা পবিত্র শবে বরাতকে অস্বীকার করে মূলত তারা হাদীসকেই অস্বীকার করল।

শবে বরাতের ব্যাপারে গায়রে মুকাল্লিদ ও আহলে হাদীসদের বিশিষ্ট মুহাদ্দীস আল্লামা মুবারকপুরী এবং নাসীরুদ্দীন আলবানীর অভিমত।

আল্লামা মুবারকপুরী তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলেন:

اعْلَمْ أَنَّهُ قَدْ وَرَدَ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ عِدَّةُ أَحَادِيثَ مَجْمُوعُهَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ لَهَا أَصْلًا فَمِنْهَا حَدِيثُ الْبَابِ وَهُوَ مُنْقَطِعٌ وَمِنْهَا حَدِيثُ عَائِشَةَ وَمِنْهَا حَدِيثُ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَمِنْهَا حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا وَمِنْهَا حَدِيثُ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَهَذِهِ الْأَحَادِيثُ بِمَجْمُوعِهَا حُجَّةٌ عَلَى مَنْ زَعَمَ أَنَّهُ لَمْ يَثْبُتْ فِي فَضِيلَةِ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ شَيْءٌ وَاَللَّهُ تَعَالَى أَعْلَمُ

অর্থাৎ: শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। এর দ্বারা বুঝা যায় এটি ভিত্তিহীন নয় বরং শরীয়তে এর ভিত্তি আছে। যেসব সাহাবী থেকে শবে বরাতের হাদীস বর্ণিত, তন্মধ্যে আলোচ্য অধ্যায়ের হাদীস এবং হযরত আয়েশা, হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ও হযরত আলী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। সুতরাং এসব হাদীসের সমষ্টি ঐসকল লোকদের বিরুদ্ধে দলীল হবে, যারা শবে বরাতকে অস্বীকার করে।

আল্লামা নাসীরুদ্দীন আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা নামক গ্রন্থের ১১৪৪ নং হাদীসের অধীনে শবে বরাতের হাদীসগুলোর সূত্রের উপর পর্যালোচনা করে বলেন:

وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب… فما نقله الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” (ص 107) عن أهل التعديل والتجريح أنه ليس في فضل ليلة لنصف من شعبان حديث صحيح، فليس مما ينبغي الاعتماد عليه.

সারকথা হলো, এসকল সূত্রের সমষ্টির কারণে প্রতীয়মান হয় যে, শবে বরাত সংক্রান্ত হাদীসগুলো নি:সন্দেহে সহীহ। অতএব কাসেমী রহ. ইসলাহুল মাসাজিদ নামকগ্রন্থে জরাহ-তা‘দীলকারীদের পক্ষ হতে যা নকল করেছেন যে, “শবে বরাত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই” তাঁর একথা গ্রহণযোগ্য নয়। (সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ৩/১৩৮)

শায়েখ শুয়াইব আল আরনাউতের অভিমত:

বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও হাদীস বিশ্লেষক শায়েখ শুয়াইব আল আরনাউত মুসনাদে আহমাদের টীকায় আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. কর্তৃক শবে বরাতের হাদীসটির উপর মন্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন:

حديث صحيح بشواهده.. وله شاهد من حديث عائشة، وآخر من حديث معاذ بن جبل، وثالث من حديث أبي موسى الأشعري، ورابع من حديث أبي بكر، وخامس من حديث أبي ثعلبة الخشني، وسادس من حديث أبي هريرة، وسابع من حديث عوف بن مالك. وهذه الشواهد وإن كان في إسناد كل منها مقال إلا أنه بمجموعها يصح الحديث ويقوى. وقد نقل القاسمي في كتابه “إصلاح المساجد” ص 100 عن أهل التعديل والتجريح “أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث يصح”، وهذا يعني أنه ليس في هذا الباب حديث يصح إسناده، ولكن بمجموع تلك الأسانيد يعتضد الحديث ويتقوى.

অর্থাৎ: হাদীসটি তার সহযোগী ও সমর্থক অন্যান্য হাদীস দ্বারা সহীহ বলে বিবেচিত। সহযোগী অন্যান্য হাদীসগুলো হচ্ছে:
১. হযরত আয়েশা রা. এর হাদীস। ২. হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রা. এর হাদীস। ৩. হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রা. এর হাদীস। ৪. হযরত আবু বকর রা. এর হাদীস। ৫. হযরত আবু ছা‘লাবাহ আল খুসানী রা. এর হাদীস। ৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. এর হাদীস। ৭. হযরত আউফ ইবনে মালিক রা. এর হাদীস।
এসকল সহযোগী ও সমর্থক হাদীসগুলোর মধ্যে যদিও কিছুটা দোষত্রুটি রয়েছে, তদুপরি এসব হাদীসের সমষ্টি দ্বারা মূল হাদীস সহীহ ও শক্তিশালী সাব্যস্ত হয়। সুতরাং কাসেমী রহ. জারহ-তা‘দীলকারীদের পক্ষ হতে ইসলাহুল মাসাজিদ গ্রন্থে যা উল্লেখ করেছেন যে, “মধ্য শা‘বানের রাতের ফযীলত সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস নেই, এর অর্থ হচ্ছে এ ব্যাপারে সহীহ সূত্রে কোনো হাদীস প্রমাণিত নেই। তবে সবগুলো হাদীসের সমষ্টিগত সূত্র দ্বারা হাদীসগুলো পরস্পরে শক্তিশালী ও মজবুত হয়ে বিয়টি প্রমাণিত হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৬৬৪২, ১১/২১৬)

প্রসিদ্ধ হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এর অভিমত:

আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আল-ওরফুশ শাযীতে বলেন:

هذه الليلة ليلة البراءة وصح الروايات في فضل ليلة البراءة، وأما ما ذكر أرباب الكتب من الضعاف والمنكرات فلا أصل لها،

অর্থাৎ: এই রাতটি হচ্ছে শবে বরাত। শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কে সহীহ হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। যারা একে অস্বীকার করে তাদের কথা ভিত্তিহীন। (আল-ওরফুশ শাযী, হাদীস নং ৭৩৯, ২/১৭২)

বি: দ্র: হাদীস নাম্বার ও রেফারেন্সের ক্ষেত্রে মাকতাবা শামিলা অনুসরণ করা হয়েছে।

3 Comments

  1. Anonymous

    sundor

    Reply
  2. মুহাম্মদ আরিফ

    শুধুই কি হাদিস দ্বারা একে ব্যাখ্যা করবেন? কুর’আনুল কারীম থেকে এর কোন ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন কি নেই?

    Reply
    1. admin (Post author)

      কুরআনের ব্যখাই কি হাদীষ নয়।
      আর যদি কুরআন এর ব্যাখ্যা কিবং কুরআনের দলিল যদি সব যায়গায় একমাত্র দলিল হয় তাহলে একটু নিচের দলিলগুলো দেন।
      ১. আপনি যে কালিমা পড়ে নিজেকে মুসলিম দাবি করেন তা কোরআনের কোন আয়াতে আছে।
      ২. নামায আদায়ের বিধানগুলো কোরআনের কোন আয়াতে আছে।
      ৩. যাকাতের বিধানগুলো কোরআনের কোন আয়াতে আছে।
      ৪. হাজ্জ পালনের বিধানগুলো কোরআনের কোন আয়াতে আছে।

      এভাবে অনেক প্রশ্ন করা যাবে।
      উত্তরগুলো জানালে উপকৃত হবো।
      ধন্যবাদ

      Reply

Leave a Comment

Your email address will not be published.