ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা রয়েছে। এ নিবন্ধে পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা করতে চাই। এ সম্পর্কে সমাজে যেসব ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতা লক্ষ করা যায় তার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এই :
১. অজ্ঞতা ও অবহেলা
এ বিষয়ে শরীয়তের কী কী মূলনীতি ও বিধান রয়েছে সে সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানাশোনা নেই। উপরন্তু অনেকের এই ধারণাই নেই যে, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কেও শরীয়তের বিধিবিধান থাকতে পারে। একে তারা পুরোপুরিই ইচ্ছা-স্বাধীনতার বিষয় মনে করে। এই ধারণা ঠিক নয়। শরীয়ত এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন কারীম এবং হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত উসূল ও আহকাম তথা নীতি ও বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রতিও একটা পর্যায় পর্যন্ত শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে একেবারে উদাসীন থাকা, মনমতো চলা ভুল।
২. বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ ও ফ্যাশন-আসক্তি
পোশাক-আশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। যখন যে ফ্যাশন বের হচ্ছে তখন নির্বিচারে অনুকরণকেই ‘আধুনিকতা’ মনে করা হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম বা ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই অধিক অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। এসবই ভুল। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত।
হাদীস শরীফে এসেছে-‘যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯)
৩. ‘মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট’
যারা পোশাক ও সাজসজ্জার বিষয়ে মনমতো চলতে চায় কিংবা বিজাতীয়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে তারা তাদের দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে বলে থাকেন, ‘মন ভালো হওয়াই যথেষ্ট। বাইরের লেবাস-পোশাকে কী আসে যায়?’ এভাবে তারা ইসলামের শিক্ষাকে খাটো করতে চায়। অনেক সময় দেখা যায়, ইসলামী পোশাকধারী কোনো ব্যক্তির কোনো ভুল হয়ে গেলে তখন তারা এই সব কথা বড় গলায় বলতে থাকে। এসব ভুল।
ভিতর ও বাহির দু’টোর প্রতিই ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কুরআন মজীদে এসেছে,
‘তোমরা প্রকাশ্য গুনাহ ছাড় এবং আভ্যন্তরীণ গুনাহ ছাড়।’ (সূরা আনআম : ১২০)
কারো মধ্যে যদি কোনো দোষ থাকে তাহলে অবশ্যই তা দোষ, কিন্তু একে ছুতো বানিয়ে তার গুণটাকে অস্বীকার করা তো ভালো নয়।
মোটকথা, ইসলামে লেবাস-পোশাকের গুরুত্ব কম নয়। পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয়, মানুষের সকল ভালো-মন্দের দলীল এটা নয়, কিন্তু একথাও তো অনস্বীকার্য যে, লেবাস-পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে।
এটা কি অস্বীকার করা যাবে যে, কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে? কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে?
৪. দ্বীনদার শ্রেণীর পোশাককে ‘সম্প্রদায়িক’ পোশাক মনে করা
অনেকে ইসলামী পোশাককে সৌদী, পাকিস্তানী বা হুজুরদের ইউনিফর্ম মনে করে থাকে। ফলে নামায-রোযা ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করলেও তারা এই পোশাক গ্রহণ করতে পারেন না। তাদের এ ধারণা ভুল। সামান্য চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, ইসলামসম্মত পোশাক মানে কোনো সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক পোশাক নয়। হ্যাঁ, তা মুসলমানের পোশাক বটে।
পোশাক সম্পর্কে ইসলামী নীতিমালা
নারী ও পুরুষের পোশাকের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য