আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছেন-১

উম্মতে মুহাম্মাদিকে আল্লাহ মধ্যমপন্থী করে সৃষ্টি করেছেন:

আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছেন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ

“এভাবেই আমি তোমাদেরকে বানিয়েছি মধ্যপন্থী উম্মত, যাতে তোমরা (কিয়ামতের দিন) মানুষ সম্পর্কে সাক্ষী হতে পার” (বাকারা : ১৪৩)।

সাক্ষীর হওয়ার জন্য মধ্যপন্থী ও পরিমিতিবোধসম্পন্ন হওয়া অপরিহার্য। কেননা তার সাক্ষ্য অনুযায়ী বিচারক রায় দিয়ে থাকে। সে যদি তার দেখা ঘটনার যথাযথ বিবরণ না দেয়, উভয়পক্ষের মাঝখানে না থেকে কোনও একদিকে ঝুঁকে পড়ে এবং সে অনুযায়ী বর্ণনায় হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটায় বা দোষ-গুণ বাড়িয়ে-কমিয়ে বলে, তবে ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না; বরং নির্দোষ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয় ও দোষী ব্যক্তি খালাস পেয়ে যায় কিংবা লঘু-দোষে গুরুদন্ড বা গুরুদোষে লঘুদন্ড হয়ে যায়। পরিণামে সমাজে জোর-জুলুম ও অন্যায়-অনাচারের পথ খুলে যায়। সুতরাং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়-বিচারের স্বার্থে সাক্ষীর নিরপেক্ষ হওয়া ও পরিমিতিবোধের পরিচয় দেওয়া অপরিহার্য।

এই যে নিরপেক্ষতা, সবকিছুর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করা ও বিশেষ কোন দিকে ঝুঁকে না পড়া-  একে আয়াতে এ উম্মতের বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ উম্মত তার সবকিছুতে পরিমিতিবোধের পরিচয় দেবে। কোনও ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার পরিচয় দেবে না। বাড়াবাড়ি করবে না ও শৈথিল্যের পরিচয় দেবে না। তা করলে সে নিজ বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলবে। অন্যদের মত প্রান্তিক ও একরোখা সম্প্রদায়ে পরিণত হবে, যেমন ইহুদী, খৃষ্টান প্রভৃতি সম্প্রদায়। উম্মত যাতে তার এ বৈশিষ্ট্য না হারায় তাই সকল কাজে তাকে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

سددوا وقاربوا واغدوا وروحوا وشيء من الدلجة والقصد، القصد تبلغوا

তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, বাড়াবাড়ি করো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড় এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা করো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৪৬৩)

মানুষের পরম গন্তব্যে পৌঁছার মহাসড়ক হল দ্বীনে ইসলাম। এ দ্বীন আদ্যোপান্ত দুই প্রান্তিকতার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। কোনও জায়গাতেই তা দিকবিশেষে সরে যায়নি। এ ছাড়া যত পথ আছে সবই প্রান্তিকতা দোষে দুষ্ট। তার অনুসরণ মানুষকে একরোখা করে তোলে ও পাপের পথে ধাবিত করে। পরিণামে মানুষ তার পরম গন্তব্য থেকে দূরে সরে যায়। এভাবে জীবন হয়ে যায় ব্যর্থ। সে ব্যর্থতা থেকে বাঁচতে হলে তথা জীবনকে স্বার্থক ও পুণ্যময় করে তুলতে হলে তার একমাত্র উপায় মধ্যপন্থার ধর্ম ইসলামের অনুসরণ।

বিখ্যাত তাবেঈ মুতাররিফ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর পুত্রকে লক্ষ করে বলেছিলেন, বাছা! পুণ্য হচ্ছে দুই পাপের মাঝখানে অর্থাৎ শৈথিল্য ও বাড়াবাড়ির মাঝখানে। সবকিছুর মধ্যাবস্থাই সেরা। সেই গতি অতি মন্দ, যার তীব্রতা বাহনকে ধ্বংস করে (উয়ূনুল আখবার, খ. ১, পৃ. ৩৭৬)।

বর্ণিত আছে,

خير الأمور أوسطها

‘সকল বিষয়ে মধ্যবর্তীটাই সেরা।’

ইসলামের যথাযথ অনুসরণ সকল ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে। কেননা ইসলাম তার শিক্ষার প্রত্যেকটি ধারায় মধ্যাবস্থার প্রতি লক্ষ রেখেছে। ‘আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, আখলাক-চরিত্র, আচার-ব্যবহার, আয়-ব্যয়, লেনদেন সবকিছুতেই তার এ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সুতরাং ইসলামের প্রকৃত অনুসারী তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে হবে মধ্যপন্থারই প্রতিকৃতি। সেজন্য প্রথমেই তাকে ইসলামের প্রতিটি বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং কোন বিষয়ে ঠিক কী নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে সে দিকে লক্ষ রেখে পথ চলতে হবে। যাতে কোন ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি বা শিথিলতাজনিত প্রান্তিকতা ইসলামী জীবনের এ অনন্য বৈশিষ্ট্যকে নস্যাৎ করতে না পারে।

‘আকীদা-বিশ্বাস :
ইসলামে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি ‘আকীদা-বিশ্বাসের যতগুলো ধারা আছে তার প্রত্যেকটিতেই মধ্যপন্থার বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট। সর্বপ্রধান ‘আকীদা আল্লাহ তাআলার যাত ও সত্তা সম্পর্কে মানুষের ভেতর নানারকম প্রান্তিকতা বিদ্যমান। কারও বিশ্বাস তিনি এমনভাবেই মানুষের ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-কল্পনা ও বোধ-ভাবনার অতীত যে, সরাসরি তাঁর পর্যন্ত পৌঁছা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য কোনও না কোনও মধ্যস্থের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। সেই মধ্যস্থের মাধ্যমেই তাঁর নৈকট্য পাওয়া ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব। এর বিপরীতে কারও বিশ্বাস, তিনি এমনই অধিগম্য যাকে বোঝার জন্য এমনকি নবী-রাসূলের শিক্ষারও কোন প্রয়োজন নেই। কেউ তাঁকে সম্পূর্ণ নির্গুণ এক নামসর্বস্ব সত্তা মনে করে, আবার কারও ধারণা তিনি মানুষেরই মত অংগ-প্রত্যংগধারী। এসবই প্রান্তিক ধারণা। প্রকৃত বিষয় এর মাঝামাঝি। সুতরাং কুরআন মাজীদ যেমন তাঁকে

الكبير المتعال

মহান, সমুচ্চ’ বলেছে, তেমনি তিনি বলেন,

فإني قريب أجيب دعوة الداع إذا دعاني

‘আমি তো কাছেই, যখন কেউ আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই।’
অর্থাৎ তিনি মহান ও সমুচ্চ হয়েও বান্দার কাছাকাছি। ফলে তাঁকে ডাকা ও পাওয়ার জন্য কোন মধ্যস্থের দরকার নেই। এমনিভাবে তিনি আদৌ নির্গুণ নন; বরং সমস্ত ভালো গুণের অন্তহীন আধার তিনি। সারা কুরআন জুড়েই রয়েছে তাঁর সে গুণাবলীর বিবরণ। কিন্তু তাই বলে তাঁর সে গুণ মানুষের মত নয় এবং তাঁকে তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে তুলনা করা যাবে না। তাঁর সত্তা ও গুণাবলী একান্তভাবে তাঁরই শান মোতাবেক-

ليس كمثله شيء

‘তাঁর মত নয় কোন কিছু।’
অর্থাৎ তিনি যেমন কারও সাথে তুলনীয় নন, তেমনি এমনও নন যে, তাঁর সম্পর্কে কোনরূপ ধারণা লাভ সম্ভব নয়। তাঁর ইবাদত-আনুগত্যের জন্য যতটুকু জানা দরকার নবী-রাসূলের শিক্ষার মাধ্যমে তাঁর সম্পর্কে ততটুকু জানা সম্ভব। এই হচ্ছে আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে ইসলামী ‘আকীদার সার-নির্যাস, যা সব রকম প্রান্তিকতা থেকে মুক্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ।

নবী-রাসূল সম্পর্কে ইসলামী আকীদা হল- তাঁরা আল্লাহ বা আল্লাহর অবতার নন, নন ফিরিশতাও। তাঁদের কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকে না। আল্লাহর গুণে তাঁদের কোন অংশীদারিত্ব নেই। বরং তাঁরা রক্ত মাংসেরই মানুষ। অন্যসব মানুষের মত প্রাকৃতিক সব বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে বিদ্যমান তাই বলে তাঁরা সাধারণ মানুষের মত দুর্বলচিত্ত, ইন্দ্রিয়পরবশ ও পাপপ্রবণও নন। তাঁদের প্রতি যেহেতু ওহী নাযিল হয়। তাই তাঁরা ওহী ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলীর অধিকারী হয়ে থাকেন এবং ওহীলব্ধ জ্ঞানের শিক্ষাদাতা হিসেবে এক অপাপবিদ্ধ সত্তা ও সর্বোচ্চ স্তরের আদর্শিক গুণাবলী তাঁরা ধারণ করেন।

সংক্ষেপে এটাই নবী-রাসূল সম্পর্কে ইসলামী বিশ্বাস। নিঃসন্দেহে এটা প্রান্তিকতামুক্ত এক ভারসাম্যমান বিশ্বাস। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে এ বিশ্বাসেরই শিক্ষাদান করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
(তরজমা) ‘বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ (কাহফ : ১১০)।
অর্থাৎ আমি ঈশ্বর নই, ঐশ্বরিক কোন ক্ষমতা আমার নেই। আমি একজন মানুষ, তবে তোমাদের উপর ওহী নাযিল হয় না, আমার প্রতি হয় এবং ওহী সংশ্লিষ্ট বিশেষত্ব আমার আছে বিধায় এক স্বতন্ত্র মর্যাদারও আমি ধারক। এভাবে অতি সংক্ষেপে এ আয়াত নবী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ধারণা আমাদের সরবরাহ করেছে।

এর বিপরীতে নবীগণকে ঈশ্বর বা ঐশ্বরিক গুণসম্পন্ন সত্তা মনে করা যেমন চরম বাড়াবাড়ি, তেমনি তাঁদেরকে সাধারণ মানুষের মত দোষগুণসম্পন্ন বলে ধারণা করাটাও তাদের প্রকৃত মর্যাদার পরিপন্থী। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে আজ তাঁর উম্মতের মধ্যেই এ উভয়বিধ প্রান্তিকতা লক্ষ করা যায়। এক শ্রেণীর লোক তাঁর নবুওয়াতী এবং তাঁর কথা ও কর্মের প্রামাণিক মর্যাদা স্বীকার করে না। তাদের দৃষ্টিতে তাঁর মর্যাদা একজন বার্তাবাহকের বেশি নয়।

অপর এক দলের বিশ্বাস এর সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তারা তাঁর মর্যাদাদানে চরম বাড়াবাড়ির শিকার। তাদের মতে মাটির মানুষ বলাটা তাঁর পক্ষে অমর্যাদাকর। তাদের মতে তিনি নূরের সৃষ্টি। অনেকে এতটুকু বলেই ক্ষান্ত নয়; বরং তাদের বিশ্বাস তিনি সর্বজ্ঞানের অধিকারী একজন ঐশ্বরিক এখতিয়ারসম্পন্ন সত্তা। প্রকৃত সত্য এ উভয় ধারণার মাঝখানে। উপরে বর্ণিত আয়াতটি এ উভয় ধারণাই খন্ডন করছে এবং জানাচ্ছে, তাঁকে তাঁর প্রকৃত মর্যাদার উপরে তুলে খোদা বানিয়ে দিও না এবং নিচে নামিয়ে অমর্যাদাও করো না। নবুওয়াতের যে প্রকৃত অবস্থান সেখানেই তাঁকে থাকতে দাও। তাতেই তাঁর সম্মান। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপুল সংখ্যক হাদীস দ্বারা যেমন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে নিজ মর্যাদা তুলে ধরেছেন, তেমনি সাবধানও করেছেন যাতে মর্যাদাদানের ক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন করা না হয়। তিনি বলেন,

لا تطروني كما اطرت النصارى ابن مريم، فإنما أنا عبده فقولوا عبد الله ورسوله

‘খৃষ্টান সম্পদ্রায় যেমন মারয়াম-পুত্র (‘ঈসা আলাইহিস সালাম)-এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে (এমনকি তারা তাঁকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছে), তেমনি আমাকে নিয়ে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। আমি তো তাঁর বান্দা মাত্র। সুতরাং বলো আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’ (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৪৪৫)।

আখিরাত সম্পর্কিত আকিদা:
‘আকীদায়ও গুরুত্বের সাথে এ মাত্রাজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আখিরাতের সফলতাই মানব জীবনের পরম লক্ষ এবং সেই লক্ষেই মানুষের যাবতীয় কাজ অনুষ্ঠিত, এতো ঠিক, কিন্তু তার মানে এ নয় যে, সে ইহজগতিকতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করবে এবং আখিরাতের সফলতার জন্য দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা জরুরি মনে করবে। এটা বৈরাগ্যবাদ, ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোন স্থান নেই। বরং আখিরাত-বিশ্বাসের অর্থ হচ্ছে মানুষ পার্থিব জীবনের মোহে বুঁদ হবে না, সে পার্থিব জীবনে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে আর তা করবে আখিরাতকে মাথায় রেখে। এভাবে পার্থিব জীবনের স্বচ্ছ-সুষ্ঠু নির্বাহ দ্বারা আখিরাতকে নির্মাণ করবে। আখিরাত যেহেতু অবিনশ্বর আর দুনিয়া নশ্বর, তাই মাত্রাজ্ঞানের দাবি এটাই যে, প্রত্যেকটিকে তার আপন পর্যায়ে রেখে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মপন্থা অবলম্বন করবে।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তার দুনিয়াকে ভালোবাসে সে তার আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আর যে তার আখিরাতকে ভালোবাসে সে তার দুনিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে (অর্থাৎ উভয়দিক সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করা সম্ভব নয়) সুতরাং তোমরা স্থায়ীকে অস্থায়ীর উপর প্রাধান্য দাও’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৬৯৭ মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৮৫৩।
অর্থাৎ ভালো আখিরাতকেই বাসবে আর ইহজীবনের প্রাসঙ্গিকতা ও আখিরাতের সঞ্চয় হিসেবে দুনিয়ার যা কিছু প্রয়োজন মোহমুক্ত হয়ে তাও আনজাম দিয়ে যাবে। এই মাত্রাজ্ঞানের অনুসরণেই উভয় জাহানের কল্যাণ। সে কল্যাণ অর্জনের জন্যই দুআ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে,

ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار

হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দাও দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের কল্যাণ আর আমাদেরকে রক্ষা কর জাহান্নামের আযাব থেকে’ (বাকারা : ২০১)।

যেকোন ‘আকীদায় মধ্যপন্থা ত্যাগ করলে পথভ্রষ্টতা হয় তার অনিবার্য পরিণতি। ইতিহাসে এ পর্যন্ত বহুলোক এভাবেই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি এ কারণে বহু দল-উপদলও সৃষ্টি হয়েছে। বরং সত্যকথা হচ্ছে মুসলিম জাতিসত্তার ভাঙন সৃষ্টি ও ইসলামের ভেতর নানা-ফির্কার উৎপত্তি প্রধানত আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা পরিত্যাগেরই কুফল। মু’তাযিলা, মুরজিয়া, জাহমিয়া, কাদরিয়া, খারিজী, রাফিজী, বাতেনী, কারামাতী প্রভৃতি সম্প্রদায়সমূহ এভাবেই অস্তিত্ব লাভ করেছে। কোন সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে বিশেষ কোন আকীদায় শিথিলতাকে কেন্দ্র করে এবং কোনওটির মূলে রয়েছে সেই ‘আকীদা বা অন্য কোনও বিষয়ে বাড়াবাড়িজনিত প্রান্তিকতা।

উল্লেখ্য, কোন বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির শিথিলতাহেতু যারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় অন্যের প্রতি আচরণে তারাও কিন্তু বাড়াবাড়ির পরিচয় দেয় ও চরমপন্থা অবলম্বন করে। তাছাড়া এমনিতেও সেই শিথিল দৃষ্টিভঙ্গির ভেতরই একরকম বাড়াবাড়ি ও হঠকারিতা নিহিত থাকে এবং থাকে নিজ মত ও চিন্তাভাবনার উপর সীমাতিরিক্ত আস্থা ও অহমবোধ। তাই দলীল-প্রমাণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও তারা ভিন্নমতকে মেনে নিতে পারে না। সুতরাং এ হিসেবে শিথিলতা ও বাড়াবাড়ি মূলত একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কিংবা বলা যায় সীমালঙ্ঘন ও অহমবোধই আসল রোগ। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে বাড়াবাড়ির প্রতি অংগুলিনির্দেশ করে তার অনিষ্টতা সম্পর্কে উম্মতকে সাবধান করেছেন ও তা পরিহার করে মধ্যপন্থা আকড়ে ধরার তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন, (অর্থ) কথা ও কাজে সীমালঙ্ঘনকারীগণ ধ্বংস হোক’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭০)।
আরও ইরশাদ করেন, (অর্থ) সাবধান তোমরা দীনের ভেতর বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা দীনের ভেতর বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৩০৫৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩০২৯; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৮৭১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৮৬৭)

পরবর্তী অংশ= আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছেন-২

3 Comments

  1. Pingback: আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছেন-২ | ইসলাম বার্তা

  2. Pingback: ইসলামে বিদ‘আতের উৎপত্তি যেভাবে-১ | ইসলাম বার্তা

  3. Pingback: ইসলামে বিদআতের উৎপত্তি যেভাবে-১ | ইসলাম বার্তা

Leave a Comment

Your email address will not be published.