বিতরের নামায পড়ার তরীকা

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম ও নির্দেশনা এবং তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী খুলাফায়ে রাশেদীন ,অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীনের বর্ণনা ও আমল থেকে প্রমাণিত বিতরের  নামায নিম্নরূপ:

ক.তিন রাকাত।
খ.দ্বিতীয় রাকাত শেষে প্রথম বৈঠকে তাশাহ্হুদ পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। সালাম ফেরাবে তিন রাকাত পূর্ণ করে।
গ. বিতরের নামায মাগরিবের নামাযেরই অনুরূপ। অর্থাৎ দুই  বৈঠক ও এক সালামে তিন রাকাত। তবে পার্থক্য হল বিতরের নামাযের তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহা পাঠ করার পর সূরা মেলাবে, যা মাগরিবের নামাযে নেই।
ঘ.তৃতীয় রাকাতে সূরা মিলানোর পর তাকবীর বলে দোয়ায়ে কুনূত পড়বে।

নিন্মে হাদীস ও আছার থেকে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল:
ক.বিতরের নামায তিন রাকাত:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন

১.হযরত আবু সালামা র. থেকে বর্ণিত-
أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ فقال: يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي رواه البخارى برقم ১১৪৭ ومسلم برقم ৭৩৪ ومحمد فى الحجة على اهل المدينة ১/১৩৩ وقال أبو عمر ابن عبد البر أيضا فى الاستذكار২/১০০ في معنى قوله في حديث هذا الباب: أربعا ثم أربعا ثم ثلاثا وجه رابع وهو أنه كان ينام بعد الأربع ثم ينام بعد الأربع ثم يقوم فيوتر بثلاث.
অর্থ: তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করেন যে,রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করোনা! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে প্রশ্ন করোনা! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। সহীহ বুখারী হা.১১৪৭ সহীহ মুসলিম হা.৭৩৪

২.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন-
قلت لعائشة رضي الله عنها: بكم كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يوتر ؟ قالت كان يوتر بأربع وثلاث وست وثلاث وثمان وثلاث وعشر وثلاث ولم يكن يوتر بأنقص من سبع ولا بأكثر من ثلاث عشرة.رواه ابوداود فى السنن برقم- ১৩৫৭ واحمد فى المسند برقم ২৫১৫৯  وقال شعيب: إسناده صحيح على شرط مسلم. والطحاوى فى شرح معانى الآثار১/২০১ وقال العينى فى نخب الافكار ৩/২৪১ اسناده صحيح.
অর্থ: আমি হযরত আয়েশা রা. এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম   যে,নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে বলেন- চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন এবং দশ ও তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩ হা.১৩৫৭ তহাবী শরীফ ১/২০১ মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯ হা.২৫১৫৯
এ হাদীসে রাতের পুরো নামাযকেই বিতর শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। আর সর্বাবস্থায় তিন রাকাত আলাদা ভাবে পড়ার কথা উল্লেখিত হয়েছে, এটিই বিতর

৩.হযরত সা‘দ ইবনে হিশাম র.বর্ণনা করেন-
عن عائشة ان رسول الله صلى الله عليه و سلم كان إذا صلى العشاء دخل المنزل ثم صلى ركعتين ثم صلى بعدهما ركعتين أطول منهما ثم أوتر بثلاث لا يفصل فيهن.ثم صلى ركعتين وهو جالس يركع وهو جالس ويسجد وهو قاعد جالس. رواه احمد فى المسند برقم ۲٥۱۰۱ ورجاله ثقات رجال الشيخين ما خلا محمد راشد وهم ثقة، كذا قال شعيب الارنووط فى تحقيق المسند.
অর্থ: হযরত আয়েশা রা.বলেন- ইশার নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করতেন। তারপর দুই রাকাত নাময পড়তেন। অতঃপর আরও দুই রাকাত পড়তেন, যা পূর্ব থেকে দীর্ঘ হত। তারপর তিন রাকাতে বিতর পড়তেন, তাতে মাঝে অর্থাৎ দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন না। মুসনাদে আহমদ-৬/১৫০-১৫১ হা.২৫১০১
স্মর্তব্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায পড়তেন শেষ রাতে তাহাজ্জুদের পর। তাই তাঁর বিতরের নামায সম্পর্কে সবচে’ বেশী অবগত ছিলেন উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা রা.। তাবেয়ী হযরত সা‘দ ইবনে হিশাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে নবীজীর বিতরের নামাযের তরীকা জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাঁকে পাঠালেন হযরত আয়েশা রা. এর কাছে, আর বললেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায সম্পর্কে দুনিয়ার সবচে’ বেশী জানেন হযরত আয়েশা রা.।
সহীহ মুসলিম হা.১৭৩৯
হযরত আয়েশা রা. থেকে নবীজীর বিতরের নামায সংক্রান্ত এ হাদীস বর্ণনা করেছেন- উরওয়া, মাসরূক, কাসেম ইবনে মুহাম্মদ, আসওয়াদ, আবুসালামা, সা‘দ ইবনে হিশাম, আলকামা, আবদুল্লাহ ইবনে আবী কাইস, আব্দুল্লাহ ইবনে শাকীক প্রমুখ। এসকল হাদীস বহু সনদে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে রয়েছে। সকল বর্ণনাগুলো সামনে রেখে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উপরে বর্ণিত তরীকায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়েছেন। এ মর্মে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. উপরোল্লেখিত দ্বিতীয় হাদীসটি সম্পর্কে লেখেন-
وهذا أصح ما وقفت عليه من ذلك، وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة من ذلك والله أعلم.فتح البارى-٣-۲٦
আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।
ফাতহুল বারী ৩/২৬

হাফেজ বদরুদ্দীন আইনী র. বলেন-
ولكن اذاكشفت معانيها يرجع كلها الى معنى واحد.وهو المعنى الذى يفهم من حديث سعد ابن هشام من ان الوتر ثلاث ركعات بقعدتين وتسليمة واحدة فى آخره. نخب الافكار ৩/২১৬
অর্থাৎ বর্ণিত হাদীসের বিভিন্নতার মাঝে সমন্বয় করলে অর্থ দাঁড়ায়, বিতরের নামায দুই বৈঠক ও এক সালামে তিন রাকাত,যা সা‘দ ইবনে হিশামের হাদীস থেকে বুঝে আসে। নুখাবুল আফকার ৩/২১৬

৪.হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى مِنَ اللَّيْلِ ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَيُوتِرُ بِثَلاَثٍ وَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ .رواه النسائى فى السنن ১/২৪৯ برقم ১৭০৭ والطحاوى ১/২০২ وقال العينى فى نخب الافكار ৩/২৫২ على شرط مسلم.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে আট রাকাত নামায পড়তেন। অতপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং ফজরের নামাযের পূর্বে আরো দুই রাকাত নামায আদায় করতেন। সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৭ তহাবী ১/২০২ নুখাবুল আফকার ৩/২৫১

৫.হযরত শাবী র. বলেন-
سألت عبد الله بن عباس وعبد الله بن عمر عن صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم بالليل . فقالا ثلاث عشرة ركعة ، منها ثمان، ويوتر بثلاث، وركعتين بعد الفجر.رواه ابن ماجة فى السنن برقم ১৩৬১ وابن نصر فى صلاة الوتر كما فى مختصرالمقريزى- ২৬০ والطحاوى فى شرح معانى الآثار১/১৯৭:وقال العينى فى نخب الافكار ৩/২১১ :اسناد صحيح على شرط الشيخين.
অর্থ: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞেস করেছি- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায কেমন ছিল? তাঁরা উভয়ে বলেন: (তিনি রাতে) মোট তের রাকাত (নামায) পড়তেন। প্রথমে আট রাকাত পড়তেন। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আর ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে দুই রাকাত (ফজরের সুন্নত) আদায় করতেন। সুনানে ইবনে মাযাহ হা.১৩৬১ তহাবী ১/১৯৭ এর সনদ সহীহ, নুখাবুল আফকার ৩/২১১ সালাতুল বিত্র পৃ.২৬০

৬.মুহাম্মদ ইবনে আলী তাঁর পিতা থেকে, এবং তিনি তাঁর দাদা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন-

عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : أَنَّهُ قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَاسْتَنَّ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ نَامَ ثُمَّ قَامَ فَاسْتَنَّ ثُمَّ تَوَضَّأَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى صَلَّى سِتًّا ثُمَّ أَوْتَرَ بِثَلاَثٍ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ .رواه النسائى فى السنن برقم- ১৭০৪ واحمد فى المسند برقم-৩২৭১ وقال شعيب : إسناده قوي على شرط مسلم. والطحاوى فى شرح معانى الاثار ১/২০১-২০২
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শয্যা থেকে উঠলেন। এরপর মিসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন; এভাবে দুই-দুই করে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এবং সবশেষে আরও দুই রাকাত নামায পড়লেন। সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৪ মুসনাদে আহমদ ১/৩৫০ হা.৩২৭১ তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২
সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায়-
ثم فعل ذلك ثلاث مرات ست ركعات كل ذلك يستاك ويتوضأ ويقرأ هؤلاء الآيات ثم أوتر بثلاث.
অর্থাৎ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তিন বারে ছয় রাকাত নামায আদায় করলেন। প্রতি বারই মিসওয়াক ও অযু করেছেন এবং উপরিউক্ত আয়াতগুলো পড়েছেন। সবশেষে তিন রাকাত বিতর পড়েছেন। সহীহ মুসলিম ১/২৬১ হা.৭৬৩ সহীহ আবু আওয়ানা ২/৩২১
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের  বিতরের নামাযের  আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.। তিনি একবার নবীজীর ঘরে রাত্রি যাপন করেছেন তাঁর নামায প্রত্যক্ষ করার জন্য। তাঁর কাছ থেকে ঐ রাতের বিবরণ সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করেছেন-হযরত কুরাইব, তাউস, আবু যামরাহ, সায়ীদ ইবরে যুবাইর, শা‘বী, আবু মিজ্লায, আবু রিশ্দীন, আলী ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইক্রিমা ইবনে খালেদ, আতা, ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ, ইয়াহ্ইয়া আল জায্যার, হাবীব প্রমুখ। এতে তিনি কখনো সংক্ষেপে কখনো বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন; বর্ণনাকারীগণও এমনটি করেছেন। ফলে এক রাতের ঘটনা হওয়া সত্ত্বেও হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে এর বিবরণ বিভিন্নভাবে এসেছে। এ সকল বর্ণনার মাঝে সমন্বয় করলে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে,উপরোল্লেখিত তরীকায়ই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায আদায় করেছেন। উপরন্তু সা‘দ ইবনে হিশাম ইবনে আব্বাস রা. কে বিতরের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে হযরত আয়েশা রা. এর কাছে পাঠান। আর বলে দেন- তিনি কি বলেছেন আমাকেও জানাবে। অতঃপর সা‘দ ইবনে হিশাম ফিরে এসে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলেন। সব শুনে ইবনে আব্বাস রা. বললেন- ঠিক বলেছ, এটিই বিতরের নামাযের পদ্ধতি। সুযোগ থাকলে আমি সরাসরি হযরত আয়েশা রা. এর কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে আসতাম। সহীহ মুসলিম হা.১৭৩৯
সুতরাং বোধগম্য হয় যে, রাসুলের বিতরের নামাযের বিবরণে তাঁরা উভয়ে একমত- অর্থাৎ বিতরের নামায তিন রাকাত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং তিন রাকাতে তিনটি নির্দিষ্ট সূরা তিলাওয়াত করতেন:

১. আব্দুল আযীয ইবনে জুরাইজ বলেন-
سألت عائشة رضي الله عنها بأي شيء كان يوتر رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال يقرأ في الأولى بسبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية بقل يا ايها الكافرون وفي الثالثة بقل هو الله احد والمعوذتين. رواه الترمذى فى السنن১/৬১ برقم-৪৬৩ وقال :هذا حديث حسن صحيح.(احمد شاكر) وابوداود ১/২০১ وابن ماجة صـ ৭৩ واحمد فى المسندبرقم-২৫৯৪৮  والخوارزمى فى جامع المسانيد১/৪০৭-৪০৮ . وقال الحافظ ابن حجر فى نتائج الافكار فى تخريج الاذكار১/৩৫৫:هذا حديث حسن.

অর্থ: আমি আয়েশা রা.কে জিজ্ঞেস করেছি,  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামাযে কী কী সূরা পাঠ করতেন? উম্মুল মু’মিনীন বলেছেন, তিনি প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ ও ‘মুআওয়াযাতাইন’ (ফালাক ও নাস) পড়তেন। সুনানে তিরমিযী ১/৬১ সুনানে আবু দাউদ ১/২০১ সুনানে ইবনে মাযাহ পৃ.৭৩ মুসনাদে আহমদ ৬/২২৭ জামেউল মাসানীদ ১/৪০৭-৪০৮

২. হযরত ‘আমরা বিনতে আব্দুর রহমান উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেন-
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث. يقرأ في الركعة الأولى بسبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا ايها الكافرون وفي الثالثة قل هو الله احد وقل اعوذ برب الفلق وقل اعوذ برب الناس. رواه الحاكم فى المستدرك ১/৩০৫ برقم-১১৪৪ وقال: هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه. وقال الذهبي فى التلخيص: رواه الثقات عنه، وهو على شرط البخارى ومسلم. ورواه الطحاوى فى شرح معانى الآثار ১/২০১.وقال الذهبى فى تنقيح التحقيق ১/৩২৮- تصحيحا للحديث وردا على ابن الجوزى :هذا تعنت فان يحى بن ايوب من رجال الصحيحين. وقال الحافظ ابن حجر فى نتائج الافكار فى تخريج احاديث الأذكار১/৩৫৬: هذا حديث حسن. وقال فى التلخيص২/১১০: قَالَ الْعُقَيْلِيُّ : إسْنَادُهُ صَالِحٌ . وقال العينى فى نخب الافكار :اسناده صحيح.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায তিন রাকাত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। আলমুসতাদরাক ১/৩০৫ তহাবী ১/২০১ হাদীসটি সহীহ- আত্তানকীহ লিয যাহাবী ১/৩২৮ নাতাইযুল আফকার ফি তাখরীজিল আযকার লি ইবনে হাজার ১/৩৫৬

৩.হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ كَانَ يُوتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ كَانَ يَقْرَأُ فِى الأُولَى بِـ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى وَفِى الثَّانِيَةِبـ  قُلْ يَا أَيُّهَاالْكَافِرُونَ  وَفِى الثَّالِثَةِ بِـ  قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ  وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرُّكُوعِ. رواه النسائى فى السنن১/১৯১ برقم-১৬৯৯والطحاوى فى شرح مشكل الآثار ১১/৩৬৮ وقال شعيب:اسناده صحيح. وابن ماجة برقم-১১৮২ وابوعلى ابن السكن فى الصحيح كما ذكره الحافظ فى التلخيص ২/১৮ وقال ابن القطان فى الوهم والايهام : صححه ابومحمد عبدالحق ووافقه فيه ابن القطان أيضا. وقال العينى فى العمدة ৭/১৯:اسناده صحيح.وقال الألبانى فى ارواء الغليل ২/১৬৭: قلت : وهذا سند جيد رجاله كلهم ثقات رجال الشيخين غير علي بن ميمون وهو ثقة كما في ” التقريب “. وقد تابعه فطر بن خليفة عند الدارقطني ( ১৭৫ ) ومسعر بن كدام عند البيهقي ( ২ / ৪০ ) كلاهما عن زبيد به . قلت : فصح بذلك الإسناد . وله إسناد آخر عن سعيد بن عبد الرحمن الخ
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন । সুনানে নাসায়ী ১/১৯১ হা.১৬৯৯ মুশকিলুল আছার ১১/৩৬৮ হাদীসটি সহীহ, আলওয়াহামু ওয়াল ইহাম ৩/৩৮৩ আলবানী সাহেবও এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- ইরওয়াউল গালীল ২/১৬৭

৪.সায়ীদ ইবরে জুবাইর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণনা করেন-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث يقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى وفي الثانية قل يا ايها الكافرون وفي الثالثة قل هو الله احد.رواه النسائى فى السنن ১/২৪৯ برقم-১৪২৭ والترمذى ১/৬১ برقم-৪৬২ والدارمى برقم-১৫৮৯ وابن ابى شيبة ৪/৫৫২ برقم-৬৯৫১ واحمد فى المسند ১/২৯৯ .قال الشيخ محمود سعيد ممدوح فى “التعريف باوهام من قسم السنن الى صحيح وضعيف” ৪/৪৩৯ :اسناده صحيح كما قال الامام النووى وغيره. وقال ايضا ৪/৪৪৪ :صحيح الاسناد رجاله حفاظ ثقات.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায তিন রাকাত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। সুনানে নাসায়ী১/২৪৯ হা.১৪২৭ সুনানে তিরমিযী ১/৬১ হা.৪৬২ সুনানে দারিমী হা.১৫৮৯ ইবনে আবি শাইবা ৪/৫১২ হা.৬৯৫১ মুসনাদে আহমদ১/২৯৯-৩০০
ইমাম নববী ও অন্যান্যরা বলেছেন- এ হাদীস সহীহ- আত্তা‘রীফ, মাহমূদ সায়ীদ মামদূহ-৪/৪৪৪

৫.হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্যা রা.বর্ণনা করেন-
أنه صلى مع النبي صلى الله عليه و سلم الوتر فقرأ في الأولى بـ سبح اسم ربك الأعلى وفي الثانية قل يا أيها الكافرون وفي الثالثة قل هو الله أحد فلما فرغ قال سبحان الملك القدوس ثلاثا يمد صوته بالثالثة.رواه النسائى فى السنن برقم- ১৭৩৩.والطحاوى فى شرح معانى الآثار১/২০৫ وابن ابى شيبة برقم- ৬৯৪৩ والخوارزمى فى جامع المسانيد ১/৪১৪ واحمد برقم-১৫৩৯০ وقال شعيب: إسناده صحيح على شرط الشيخين. وقال الحافظ فى التلخيص ২/১১১ : وَحَدِيثُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبْزَى : رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيُّ وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ .وقال العينى فى نخب الافكار ৩/২৭১ :رجاله ثقات. وقال الشيخ محمد عوامة :اسناد المصنف (ابن ابى شيبة) صحيح.
অর্থাৎ তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের সাথে বিতর পড়েছেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েছেন। তহাবী ১/২০৫ ইবনে আবীশাইবা ৪/৫১০ হা.৬৯৪৪ কিতাবুল আছার-১/৩২৬ জামেউল মাসানীদ ১/৪১৪
ইবনে হাজার আসকালানী র. আত্তালখীছুল হাবীরে বলেনاسناده حسن  এই সনদ হাসান তথা নির্ভরযোগ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published.