সৃষ্টির শুরু থেকেই নর-নারীর যে ব্যবধান

সাদা আর কালোর পার্থক্য যেমন স্পষ্ট, রাত আর দিনের ব্যবধান যেমন বলাবাহুল্য, নর আর নারীর দূরুত্বও তেমনি অতি স্পষ্ট, বর্ণনাতীত। যেখানে সাদার প্রয়োজন সেখানে যেভাবে কালোকে স্হাপন করা যায় না, ঠিক তেমনিই যেকানে নরের প্রয়োজন সেখানে যেভাবে কালোকে স্হাপন করা যায় না, ঠিক তেমনিই যেখানে নরের প্রয়োজন সেখানেও নারীকে বসানো যায় না। নর ও নারীর এই  পার্থক্য আদি ও প্রগৈতিহাসিক। বরং সৃষ্টির শুভ সূচনা  থেকেই  নর ও নারীর ব্যবধান চলে আসছে। এই ব্যবধান সৃষ্টিগত, স্বভাবগত ও বাস্তবসিদ্ধ। তাই অবলা নারীকে সংগামী পুরুষের অঙ্গনে টেনে না এনে নারীকে থাকতে দেয়া উচিত নারীর ভুবনে। কথায় আছে ‘বন্যেরা বনেই সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’।

নর ও নারীর এই ব্যবধান প্রতিষ্ঠিত মানব স্রষ্টি শুভ সুচনাতেই। আমরা সকলেই জানি, আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেবার পর প্রথম হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন। ‘মা হাওয়া’ (আ.) কে নয়। অথচ তিনিতো সকল ক্ষমতার আধার। যা চান যেভাবে চান ঠেক সেভাবেই করতে পারেন। তাঁর ইচ্ছা ও সংকল্পে কোন বাধা নেই, অন্তরায় নেই। তাই তিনি মানব সৃণ্টির সূচনা হযরত আদম (আ.) কে দিয়ে না করে মা হাওয়া (আ.) কে দিয়ে করতে পারতেন। আপাত (স্হূল) দৃষ্টিতে এটাই তো অধিক যুক্তিসংগত। কারণ, বাস্তব বলছে, নারীর বদন চিরে যুগে যুগে পৃথিবীতে আগমন করবে মানব গোষ্ঠী। হযরত আদম (আ.) যদি মা হওয়ার বদন চিরে পৃথিবীতে পদার্পণ  করতেন তাহলে মানব প্রজননের স্বাভাবিক ধারা ও পদ্ধতির সূচনাও ঘটতো মানব সৃষ্টির সূচনার সাথে।

কোন মাধ্যম ছাড়াই বাস্তবায়িত হয় আল্লাহ’র সিদ্ধান্ত। তাই হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করতে যেমন কোন উপকরণের প্রয়োজন পড়েনি, ইচ্ছা করলে সে স্হানে একই কুদরতের ছোয়ায় সৃষ্টি করতে পারতেন তিনি হযরত হাওয়া (আ.) কে। কিন্তু মহান প্রভু স্হূলদৃষ্টি সংগত এই পথ পরিহার করে তাঁর অসীম দূরদর্শিতা বিকাশ ঘটালেন। প্রথম সৃষ্টি করলেন হযরত আদম (আ.)কে। তাই সৃষ্টির শুরুতে জগতের মুখ দেখল প্রথম পুরুষ, তারপর নারী।

আচ্ছা, আল্লাহ চাইলে কি হযরত আদম (আ.) কে যেভাবে মা-বাবা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন ‘মা’ হাওয়াকেও ঠিক তেমনি কোনরূপ পটভূমি  ছাড়া, প্রেক্ষাপট ছাড়া  অলৌকিকভাবে সৃষ্টি করতে পারতেন না? জানি, এই প্রশ্ন অবান্তর। কারণ, হযরত আদম (আ.)-এর অলৌকিক সুজনসত্যই এই প্রশ্নের বাহুল্যতা প্রমাণ করে। সে কারণে আমার মূল প্রশ্নও এখানে নয়। আমার প্রশ্ন হলো, হযরত হওয়া(আ.) কে কেন হযরত আদম (আ.)-এর পাঁজরের হাড় থেকে তৈরী করা হলো।অধিকন্তু তার পূর্বে কেন ‘মা’ হাওয়া সৃষ্টির প্রকট প্রয়োজনীয়তাপুষ্ট এক প্রেক্ষাপট নির্মাণ করা হলো? সেখানে দেখানো হলো, হযরত আদম (আ.) কে সুষ্টি করা হয়েছে। তাঁকে থাকতে দেয়া হয়েছে অফুরন্ত নেয়ামতে পূর্ণ,  শান্তি-সুখের পাণকেন্দ্র বেহেশতে। সেখানে মানব চাহিদা পূরণের সমূহ আয়োজন আছে। নদী-নালা-ঝর্ণা-ফোয়ারা, পাহাড়-পর্বত, ফল-মূল থেকে এমন কোন ভোগ্য সামগ্রী নেই যা বেহেষতে ছিল না। কিন্তু নেই শুধু নারী।

আর আদম! তিনি ভাষাতীত বরণনাতীত এই বিচিত্র সুখভুবনেও যেন মহা অসুখী। তিনি আনন্দে মহা আহ্লাদিত নন। বরং তিনি নিরিলপ্ত। তাঁর ভেতর জুড়ে হাহাকার করে মহাঝড়। কিন্তু কেন? তা তিনিও জানেন না। জানেন কেবল সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন আগুন পানি মাটি ও বাতাস দিয়ে আদমকে। তিনি জানেন, আদমের এই অগ্নিদগ্ধ হাহাকার পরম তৃপ্তিতে রূপায়িত করতে পারে, আদমের এই অসীম শূন্যতা গভীর প্রাপ্তিতায় বদলে দিতে পারে- সে কোন নিঃসীম আকাশের তলে সবুজের ঢেউ তোলা নন্দিত পার্বতিক দৃশ্য নয়; কিংবা বিচিত্র ফল-মূল-কুসম সজ্জিত কোন মধু মালঞ্চ ঘেরা  নদী কিংবা কল কল ধ্বনি তুলে বয়ে চলা কোন শীতল সুধার ঝর্ণাও নয়; বরং সে এক অবলা নারী- শুধূই একজন নারী। অতঃপর তিনি সৃষ্টি করলেন নারীকে- সৃষ্টি করলেন মা হাওয়াকে। আর তৃপ্তি প্রাপ্তি ও প্রাণময়তায় ভরে উঠল বাবা আদমের মন, অনুভুতির সকল বদ্ধকোষ, স্বর্গ হলো স্বর্গময়, স্বর্গ হলো পূর্ণ। ভাষাহীন কন্ঠে যেন ঘোষিত হলো, ‘নারী বিনা বেহেশতও শূন্য।’

মূলত নারীর মর্যাদা এখানেই!

এখান থেকে নারীর গুরুত্ব ও মর্যাদার পথ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, নারী ব্যতীত পৃথিবীর সকল সম্পদ ও প্রাচুর্য দিয়ে পুরুষের শক্তি, শরীর, ঠিকানা ও বিশাল রাজ্য জয় করা যায়, দখল করা যায়- কিন্তু তার হ্রদয় জয় করা যায় না, তৃপ্ত করা যায় না। পুরুষের মন ও অন্তরাজ্য জয় করার, বরং পুরুষের হ্রদয় ও চিত্ত পরম প্রাচুর্য এ ঐশ্বর্যময় করার একমাত্র পথ নারী এবং নারী।

একই তত্ত্বটি যদি আমরা উলটো করে ধরি, তাহলে বলতে পারি, নারী মহান প্রভুর এমন এক যাদুময় সৃষ্টি, তুদরতের এমন এক মহান বিকাশ পৃথিবীর মহাদর্পী, কুশলী পারঙ্গম যোদ্ধা, বীর্যবান বিশাল জাতি-গোষ্ঠী বছর-বছর ধরে অস্র চালিয়ে যে পরাক্রম রাজাকে নত করতে ব্যর্থ হয় এক লাস্যময়ী নারীর মুহূর্ত পরশে কুপোকাত হয়ে পড়ে সে লৌহ মানব! সাধু ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়- পুরুষ শাসন করে বিশাল সাম্রাজ্য, তার অঙ্গুলি নির্দেশে ওঠ-বস করে দেশের লক্ষ লক্ষ সিপাহী সৈন্য কর্মকর্তা; আর নারী চোখের ইংগিতে শাসিত হয় স্বয়ং রাজা, রাজার হৃদয় রাজ্য।  কারণ নারীর পরশ বিনা সকল সুখ  স্পন্দনই শোকের সানাই; পৃথিবীর সমুদয় বিত্ত-বৈভবই অনন্ত হাহাকার! তাই এ চীবনে নারীর প্রয়োজন ভাষাতীত, নারীর মর্যাদা বর্ণনাতীত!

এখানে বিস্মৃত হলে চলবে না, এই নারীই যখন পুরুষের হৃদয় রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করে অবতীর্ণ হয় মাঠকর্মে, চাকরী-বাকরীতে তখন নারীর শূন্যতায় পুরুষ সংসার হয়ে উঠে বিষসম; পুরুষের হৃদয়-মন তখন কাটা মুরগীর মত ছটফট  করতে থাকে; ছুটাছুটি করতে থাকে এঘাটে-ওঘাটে। আর তখনই সুষ্টি হয় কলংকিত কত অঘটন। পক্ষান্তরে পর পুরুষের সান্নিধ্যে কর্মরতা নারীর উষ্ম ছোয়ায় গলে গন্ধ ছড়ায় কত বিক্ষত হৃদয় তার হিসেব রাখা কি সহজ?? এক কথায়, সমস্যা চড়ায় উভয় দিকে। তাই নারীকে অবস্হান করা উচিত তার নিজস্ব ভুবনে। মূলত এর প্রতি ইংগিত করার জন্যেই মা হাওয়াকে সৃষ্টির পূর্বে এই প্রেক্ষাপটের অবতারণা।

এবার আলোচনা করা যাক নারীকে কেন পুরুষের পাঁজরের হাড় দিয়ে সৃষ্টি করা হলো সেই প্রসঙ্গে। এটাতো বলার প্রয়োজন নেই, আল্লাহ ত‘আলা চাইলে হযরত হাওয়া (আ.) কেও হযরত আদম(আ.) এর মতো সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে হযরত আদম(আ.) এর পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করে একথাই প্রতিষ্টিত করেছেনঃ নারী নর থেকে সৃষ্টি। নর   নারী থেকে নয়। তাই বাস্তব জগতের সকল কর্মকান্ড, নির্মাণ ও পরিচালনয় নেতৃত্ব দেবে নর; নারী নয়। কারণ, সৃষ্টিগতভাবেই নর মূল। নর থেকে উৎসারিত নারী। সুতরাং মূলকে ভিত্তি করেই দাড়াবে ‘অমূল’ এটাই স্বাভাবিক এবং যুক্তিগ্রাহ্য। যদি এর ব্যত্যয় ফটে তাহলে লেজে-গোবরে দশা দাড়াবে, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে হ-য-ব-র-ল অবস্হা। বর্তমান পৃথিবীতে যার উপমা  ভুড়ি ভুড়ি।

Leave a Comment

Your email address will not be published.