যে সকল অবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণ জায়েজ:
কোন ধরণের অপরাগতা ও বিশেষ কোন অসুবিধা থাকলে সেটা সব সময় ব্যতিক্রম হয় এটাই স্বাভাবিক। তখন সেই প্রয়োজনের কারণে মাকরুহও জায়েজ হয়ে যাবে। যার বিষদ বিবরণ ফতোয়ায়ে শামীতে উল্লেখ রয়েছে। যেমন কোন মহিলা যদি এত দুর্বল হয় যে গর্ভধারণের ক্ষমতা রাখেনা। অথবা সুদীর্ঘ সফরে আছে বা এমন কোথাও অবস্থান করছে যেখানে বেশিদিন থাকার ইচ্ছে নেই কোন ভিতির কারণে তারা সন্তান ধারণ করতে চাচ্ছেনা অথবা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যদি মনোমালিন্যতা থাকে, দাম্পত্য জীবন ভেঙ্গে দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে এসব ব্যক্তিগত অপারগতার ভিত্তিতে সে সকল ব্যক্তি বিশেষের জন্য সাময়িক জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা কোন বিনা শর্তে জায়েয হবে। এসকল সমস্যা দূর হয়ে গেলে তাদের জন্যও এটা করা জায়েজ হবেনা।
এমনি ভাবে কোন কারণ ছাড়া সর্বসাধারনের জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রিয়ভাবে এর ব্যাপক প্রচলন অবশ্যই মাকরুহ হবে যা অবশ্য বর্জনীয়। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, কেউ ব্যাক্তি পর্যায়ে এমন কোন উদ্দেশ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করল যা ইসলামী মূলনীতির পরিপন্থি। তাহলে তার একাজ কিছুতেই জায়েজ হবেনা। যেমন কেউ মনে করল যে যদি আমার মেয়ে হয় তাহলে লোক মন্দ বলবে। শুধু একারণে একাজ কিছুতেই জায়েজ হবেনা। কেননা তার এই উদ্দেশ্য অসৎ, পবিত্র কোরআনে এহেন উদ্দেশ্যকে বিভিন্ন স্থানে তিরস্কার করা হয়েছে। এমনিভাবে যদি কেউ দারিদ্রতার ভয়ে এমনটা করে তাহলেও জায়েজ হবেনা কারণ তার এই উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
মোট কথা, জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী এমন সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা যার দ্বারা প্রজনন ক্ষমতা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়, আর সেটা পুরুষ গ্রহণ করুক অথবা মহিলা, কোন ঔষধ, ইনজেকশনের মাধ্যমে হোক অথবা অপারেশন বা এজাতীয় কোন পন্থা গ্রহণ করা প্রিয় নবীজি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসের আলোকে সম্পূর্ণ না জায়েজ ও হারাম।
আর সাময়িক জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করা, যেমন আযল করা কোন ঔষধ, টেবলেট, কনডম, ইনজেকশন নেয়া অথবা অন্য কোন কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা সেটা ব্যক্তি বিশেষ, কোন বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতার মূহুর্তে সে প্রয়োজন অনুসারে তা ব্যবহার করা জায়েজ আছে। তবে তা হতে হবে কোন অসৎ উদ্দেশ বিহীন। তাই বলে এই পদ্ধতিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রসার ঘটানো ইসলাম পরিপন্থি কাজ।
আর এই পদ্ধতি অবলম্বন করাকে দেশ ও জাতির উন্নতি, অগ্রগতির সোপান আখ্যায়িত করা , যেটাকে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন জাতি ও দেশের জন্য ক্ষতিকারক ও অপছন্দ করেছেন, কিছুতেই জায়েজ হতে পারেনা। বিশেষত এটাকে এই কারণে যদি করা হয় যে, দারিদ্রতা ও অর্থনৈতিক মোকাবেলায় এটা বিরাট সহায়ক হবে তাহলে তা হবে আরও দুঃখজনক। কেননা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক তাঁর সুনিপূন দক্ষতা ও বিচক্ষণ প্রতিপালন ক্ষমতায় মানুষসহ সকল প্রাণীকূলের রিজিকের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছেন এবং যথাযথ পালন করে যাচ্ছেন, এখানে কারো কোন দখল বা সহযোগিতার প্রয়োজন পড়েনা। বর্বর যুগে আরবের সেই দারিদ্র লোকেরা যারা স্থায়ী অভাব অনটনের ভয়ে নিজ সন্তানদের হত্যা করত তাদের সেই ভ্রান্ত ধারণাকে খন্ডন করতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন,
তোমাদের এই কাজ, আমার অসীম ক্ষমতার প্রতি অযথা সন্দেহ পোষণ এবং আমার কর্মসূচির উপর হস্তÍক্ষেপ মাত্র। অথচ আমি তো শুধু মানুষের রিজিকের যথাযথ ব্যবস্থা স্পষ্ট ভাষায় করে রেখেছি নিজ দায়িত্বে।
وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا
“এই বিশ্ব ভুমন্ডলে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যার রিযিকের দায়িত্বভার আল্লাহর উপর ন্যস্ত নেই। তিনি এটাও জানেন যে কোন প্রাণী কখন কোথায় থাকবে বা যাবে এবং সেখানে তার রিজিকের ব্যবস্থা কিভাবে করা হবে ।” (সুরা হুদ-৬)
এই আয়াতে এবং এই জাতীয় অনেক উপমা আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টরূপে বলে দিয়েছেন যে, তিনি যত প্রাণী এ পৃথিবিতে সৃষ্টি করেছেন তাদের রিযিক অর্থাৎ সকলের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল উপায় উপকরন তিনি নিজ হাতে করেন। তিনি গর্বভরে এও বলেন, নির্ধারিত রিযিক প্রত্যেককে সাথে করে নিয়ে যেতে হবেনা বরং মহান প্রভু নিজ দায়িত্বেই বান্দার গন্তব্যস্থলে বান্দা যাওয়ার পূবেই তা সেখানে পৌঁছে দিয়ে থাকেন। সে রিজিক বান্দাকে পেতে কোন প্রকার ঝামেলা পোহাতে হবে না ।
তাঁর ভাষায়
يَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا
অর্থাৎ মহান প্রভু প্রাণীদের স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানা যেমনিভাবে জানেন ঠিক তেমনিভাবে প্রাণীদের অস্থায়ী বা ভবিষ্যতের ঠিকানাও জানেন। এবং সবখানেই তাদের রিযিক যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়ে থাকেন।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا عِنْدَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَعْلُومٍ
“এমন কেউ নেই যার ভার আমার কাছে নেই। আর আমি এর থেকে প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুসারে রিযিক অবতীর্ণ করে থাকি।” (সুরা হিজর-২১)
এই আয়তের উপর বিশ্বসী বান্দাকে এটাও মানতে হবে যে মহান আল্লাহ তায়ালা কোন একটি প্রণীকেই চিন্তাভাবনা ছাড়া (কোন পরিকল্পনা ছাড়াই) এমনিতেই সৃষ্টি করে দুনিয়াতে ছেড়ে দেন নাই। যে এগুলির অন্ন-বস্র, বাসস্হানের চিন্তা মহান প্রভূর নেই, এগুলির জন্য অন্যকেউ ভাবতে হবে বা পেরেশান হতে হবে। আর যদি কেউ এমন মনে করে যে সৃষ্টিকর্তা এই সকল সৃষ্টিজীব সৃষ্টি করে এমনিতে ছেড়ে দিয়েছেন আর এসবের কোন খোজ খবর তিনি রাখেন না। সৃষ্টিজীব দিন দিন বাড়ছে কিন্তু দেশ বা আবাদ ভূমি তো আগের মতই সীমতি রয়ে গেছে। জীবন ধারনের মহ সকল উপকরণতো সীমিত ও স্বল্প পরিসরে রয়ে গছে। এসবের কোন খোঁজখবর স্রষ্টা না রেখে খালি সৃষ্টিজীব দুনিয়াতে পাঠিয়েই যাচ্ছেন (না উজুবিল্লাহ) তাহলে তা মারাত্বক অন্যায়, মহাপাপ, এমনকি ঈমানও চলে যে তে পারে। তিনি তো এমন দয়াময় যে কোন প্রাণী দুনিয়াতে আসার পূর্বেই তার থাকা খাওয়াসহ জীবন উপকরণের যাবতীয় ব্যবস্ত্যা সুনিপুনভাবে করে রেখেছেন। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন গর্ভনালীতে এবং ভুমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে মায়ের বুকে অলৌকিকভাবে তার খাদ্যের সুব্যবস্হা করে রেখেছেন। এরপর সে দিন দিন যত বড় হচ্ছে তার চাহিদা অনুসারে বিচিত্র সব খাদ্য দ্রব্য তার সামনে উপস্হিত করে যাচ্ছেন।
পরবর্তী অংশ:
জন্মনিয়ন্ত্রণ যে সকল অবস্থায় জায়েজ=২