পর্দা সকলেই মেনে চলে

পর্দা

আধুনিক কালের অতি প্রগতিমনা কথিত ‘সুভাজনরা’ নারীর ইসলামী পর্দা প্রথা নিয়ে হৈচৈ করলেও ব্যক্তি জীবনে তারাও কিন্তু পর্দা মেনে চলেন কম-বেশী। বর্তমানে ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক পর্দা সকলকেই মেনে চলতে হয়। কারণ, পর্দার  এক অর্থ আবরণ। আরবী ‘হিজাব’ শব্দ থেকে উদগত পর্দার মূল শব্দের আভিধানিক অর্থ  এরকমই। এ অর্থে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সভ্যতার সূচনা যেখান থেকে, পর্দার শুভযাত্রাও ঠিক সেখান থেকেই। মানুষ যখন থেকে বিবেক-বুদ্ধির উৎকর্ষের নিরিখে মাপতে সক্ষম হয়েছে, মানুষ প্রাণী তবে বন্য প্রাণী  নয়, না বন-বাধারের আর দশটি প্রাণীর মতো, তখন থেকেই মানুষ তাদের জীবন পদ্ধতিকে বন্যজীবন থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র আদলে নির্মাণ করতে সচেষ্ট হয়েছে। সূচনা পর্বে গাছের পত্র-পল্লব, ছাল-বাকলা এমনকি পশুর শুকনো চামড়া দ্বারা লজ্জা ঢাকার চেষ্ঠা করেছে। সহজে-সংক্ষেপে বলতে গেলে সভ্যতার বিকাশের ক্রমবিজয়ের স্বর্ণকালে  আজ যখন মানুষ প্রতিদিন চিন্তা  ও আবিস্কারের নতুন দিগন্ত ছুঁয়ে যাচ্ছে সেই সময় হরেক রঙের পোশাক কি সেই পত্র-পল্লব, গাছের ছাল-বাকলা আর পশুর চামড়ার  স্হলাভিষিক্ত নয়?  তবে অবশ্যই তার উন্নতরূপ। বলতে গেলে বলতে হবে- তন্মধ্যে বোরকা পরিহিতা সুশান্ত বক্তিত্বময় নারীরূপ সেই উন্নতির মধ্যেও এক বিষ্ময়কর নান্দনিক পরম উন্নত রূপ।

কিন্তু সভ্যতার উৎকর্ষে  যখন মানুষ পৃথিবী ছেড়ে মঙ্গলগ্রহে ঠিকানা বানাবার চিন্তায় বিভোর ঠিক সেই সময়ে এসে যারা শর্ট প্যান্ট আর শর্টহাতা গেন্জি পরে রাজপথে নেমে এসে নারী সৌন্দরযের সস্তা প্রদর্শনীতে মেতে ওঠে আর নব্য উন্নত আধুনিক যুগটাকে যারা সেই হাজার বছর  পূর্বের সেই সভ্যতার সূচনা কালের আধনেংটো যুগের দিকে  ফিরিয়ে নিতে চায়- বিষয়টা বুঝানো যায় না কেবল তাদেরকে। আচ্ছা, যখন বস্র ছিল না তখন মানুষ পর্যাপ্ত আবরণের অভাবে আধ-আবরণে মাঠে-পথে ঘুরে বেড়িয়েছে-সেটা ছিল অপারগতা। আর আজ যখন বস্র পোশাক আবরণকে নিয়ে  শত শিল্পের আয়োজন তখন কেন, কোন অজুহাতে মানুষ সেই আদি স্টাইলের অর্ধনগ্ন ভূষণে আদি সভ্যতার প্রদর্শনী করতে যাবে?

আবরণ মানুষকে সুশীল ও সুন্দর করে এই ধারণাটা একটা অতি সাধারণ নাগরিকেরও আছে। একজন কৃষকও যখন মেঠো ব্যস্ততার প্রচন্ড  আঘাতে বিস্তারিত  পোশাক পরিধানে অক্ষম হয়ে পড়ে তখনও সে বস্র্রশূন্য হয় না, আবরণশূন্য হয় না। কারণ, একমাত্র বদ্ধ পাগল ছাড়া সকলেই এই আবরণ প্রথা মেনে চলে। শুধু তাই নয়, একজন গেঁয়ো চাষাও যখন মাঠ কর্মের বাইরে হাটে-ঘাটে বড়োতে যায় তখন আর সংক্ষিপ্ত আবরণকে যথেষ্ট  মনে করে না। বরং মনে করে তার  ব্যক্তিত্ববিরোধী। তাই সভ্যজনদের সংস্পর্শে যাবার পূর্বেই সে তার আবরণকে দীর্ঘ ও পরিপূর্ণ করে।

আমাদের সমাজে  যারা অতি আধুনিক, তারাও যখন বয়সে বড় কিংবা মর্যাদায় আরও উন্নত কারও সামনে যান তখন তাদের সংক্ষিপ্ত বসনের লতা-পাতা টেনে বিকশিত বদন ঢাকার ব্যর্থ চেষ্ঠা করেন। অর্থাৎ এই  খন্ডকালীন সময়ে অন্তত মানসিকভাবে হলেও তারা বিশ্বাস করেন, আবরণটা তাদের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক, সভ্যতার নিদর্শন।

ইসলাম যা করেছে তা হলো, এই আবরণ প্রথাটা যেটাকে মানুষ স্বভাবজাতবাবেই সভ্যতার বিকাশ বলে মেনে নিয়েছে-ইসলাম সেটাকে একটি সুনির্দিষ্ট সীমানা, একটি যথার্থ সংজ্ঞা দিয়েছে। কারণ,  মেধা-বুদ্ধির তারতম্য তার উপর শয়তানের প্ররোচনা ও রিপুর উষ্ম ও তারল্যের চাপ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই সভ্যতার মাপকাঠিতে উন্নীত জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় না। বরং তখন পতিত জীবন যাপন করেও নিজেদের ফুটানী বজায় রাখার জন্য সভ্যতার সংজ্ঞা বদলে দেয়। এই কারণে সকল দুর্বলতা ও অক্ষমতার উর্ধ্বে মহান মনিব আল্লাহ বান্দার কল্যাণার্থে জীবন সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে খুবই স্পষ্ট করে তার সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। পর্দা তার মধ্যে অন্যতম।

Leave a Comment

Your email address will not be published.